ভাষণের মাধ্যমে দেশের মানুষদের উত্তেজিত করে তোলায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন নাৎসি জার্মানির স্বৈরশাসক এডলফ হিটলার। একজন সাধারণ জার্মান থেকে দেশটির ইতিহাসের সবথেকে আলোচিত ব্যাক্তিতে পরিণত হতে হিটলারকে সাহায্য করেছে তার কণ্ঠস্বর এবং বক্তৃতা দেয়ার ভঙ্গি। কিন্তু সেই হিটলারই নানা সময়ে কন্ঠস্বরের সমস্যায় ভুগেছেন। তার চিকিৎসা করা এক চিকিৎসকের চিঠিতে জানা গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেকার হিটলারের গলার রোগ সম্পর্কে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ওই চিঠিগুলোর বয়স প্রায় ৮৬ বছর। হিটলারের চিকিৎসক ছিলেন জার্মানির নাক,কান ও গলা বিশেষজ্ঞ কার্ল অটো ভন ইকেন। ১৯৩৫ সাল থেকে হিটলারের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি হিটলারের চিকিৎসা করেছেন। এই ইকেনই তার এক কাজিনের কাছে পাঠানো চিঠিতে লিখেছিলেন, কীভাবে তিনি হিটলারের চিকিৎসা করেছেন। ইকেনেরই এক বংশোধর রবার্ট ডোপগেন পারিবারিক নথি সংরক্ষনাগারে ওই চিঠিগুলো পান। এরইমধ্যে ওই চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়েছে।
চিঠি পড়ে ধারণা করা হয় যে, নিজের গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন হিটলার।
১৯৩৫ সালে ইকেনের কাছে প্রথম চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর হিটলার স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন, আমার যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে তবে আমাকে অবশ্যই জানাবেন। ইকেন ১৯৬০ সালে মারা যান। বৃটিশ ইতিহাসবিদ রিচার্ড জে ইভানস এই চিঠিগুলোর সত্যতা প্রমাণ করেছেন। জনগণের সমর্থন পেতে প্রায় সময়ই হিটলারকে বড় বড় বক্তৃতা করতে হত। তাই অন্যান্য চিঠিতেও হিটলার তার কণ্ঠের চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এসব চিঠিতে দেখা যায়, তার পলিপ অপসারণের একটি অস্ত্রোপচার পরবর্তী ভাষণ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর চিঠিতে ইকেন হিটলারকে কণ্ঠকে বিশ্রাম দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালে বার্লিনের একটি বাঙ্কারে আত্মহত্যা করে মারা যান হিটলার। তার মৃত্যুর পর এক রুশ সাংবাদিক এই চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বিশ্বযুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ নিহতের মূল হোতা হিটলারকে তিনি হত্যা করেননি কেন। ইকেন তখন বলেছিলেন, আমি একজন চিকিৎসক, খুনি নই।