কক্সবাজারে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। গতমাসে ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৭ জন নারী। সবশেষ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজার শহরের পৃথক দুটি কটেজে তিন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নৃত্যশিল্পী ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছিলেন একটি প্রোগ্রামে।
অপরজন কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলের বাসিন্দা। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দুজনকে।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনে পৃথক স্থানে তিন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্তের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতার দুজন হলেন কক্সবাজার পৌরসভার মোহাজের পাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের ছেলে সোলাইমান শামীম (২৩) ও সদর উপজেলার খুরুশকুল মেহেদী পাড়া এলাকার খালেক।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিসে (ওসিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা লায়লা বলেন, একমাসে (আগস্ট) ৬৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
তবে গত আগস্টে ২৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের এক গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়, আগস্টের প্রথম দুই সপ্তাহে ১৫ জন এবং শেষ দুই সপ্তাহে ১১ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রেমঘটিত বিষয়, বিয়ের প্রলোভন কিংবা দুজনের সম্মতিতে যৌন সম্পরর্কে ঘটনায় পরবর্তীতে ধর্ষণ মামলা করা হচ্ছে। আমরা যখন তদন্ত করি তখন এসব বিষয় উঠে আসে। তবে কিছু কিছু মামলায় জোর করে ধর্ষণের প্রমাণ মেলে।
লিগ্যাল এইড কক্সবাজারের আইনজীবী বাপ্পী শর্মা বলেন, একমাসে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তা পর্যালোচনা করলে বিষয়টি উদ্বেগজনকই বলতে হয়। পুরুষের বিকৃত মানসিকতা, অভিযোগের পক্ষপাতমূলক তদন্ত আর বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ধর্ষণ প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং দ্রুত সময়ে বিচার নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণ প্রবণতা কমে আসবে বলেও মন্তব্য তার।
তবে, সামাজিক অবক্ষয়কে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ বলে দায়ী করেছেন কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) নুরুল ইসলাম সায়েম।
কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমে এলে ধর্ষণও কমে আসবে। একইসঙ্গে নারীদের বেপরোয়া চালচলন ও অশ্লীল পোশাককে ধর্ষণের অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন তিনি।
সহকারী পিপি এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী তাপস রক্ষিত বলেন, ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ আইনের মারপ্যাঁচে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও নানা প্রতিবন্ধকতা।
তিনি বলেন, ধর্ষণে মৃত্যু হলে মামলাপ্রাপ্তির ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু বিচার তো দূরের কথা, সঠিক সময়ে তদন্ত কাজও শেষ হয় না।
এতে অপরাধীরা আইনকে যেমন তোয়াক্কা করছেন না, তেমনি অপরাধ করতেও দ্বিধা করছেন না তারা।