English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
- Advertisement -

মাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রাখলেন ছেলে, ফ্ল্যাটে তুলে দিলেন ইউএনও

- Advertisements -

কাপড় নষ্ট করায় যশোরের চৌগাছায় ছেলে-বৌমা কর্তৃক অসুস্থ অর্ধনগ্ন অবস্থায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা আমেনা বেগমকে (৭০) নামের এক বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে ছেলের ফ্ল্যাট বাড়িতে তুলে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) ইরুফা সুলতানা।

সোমবার বিকেলে উপজেলার পাশাপোল ইউনয়িনের বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে ।

স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ছেলের বাড়িতে তুলে দেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরের ময়লার ভেতর মেঝেতে একটি ছেড়া কাঁথার ওপর প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে তীব্র গরমে কোনোরকম পাখার ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। অথচ পাশেই পাকা ছাদের রান্না ঘরে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে পুত্রবধূ রান্না করছেন। পাশেই আলিশান ফ্ল্যাটবাড়ি। যার প্রতিটি রুমের মেঝে ও ছাদে ওঠার সিঁড়ি টাইলস করা। কক্ষগুলো টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে ভরা।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা পুত্রবধূর কাছে বৃদ্ধা শাশুড়িকে কেন এই ময়লার মধ্যে গোয়াল ঘরে রেখেছেন জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘উনি কাপড়ে প্রসাব-পায়খানা করেন। তাই গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে।’ পরে বলেন, তিনি নিজেই নাকি এখানে থাকতে চেয়েছেন!

অভিযানের খবরে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তারা অভিযোগ করেন, বৃদ্ধার ঝগড়াটে পুত্রবধূর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না। বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে আব্দুল কাদেরের দুই ছেলে। তিনি বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট ছেলে বিদেশে থাকেন। বৃদ্ধার মেয়ের জামাই তিন থেকে চার দিন আগে ছেলের বাড়িতে রেখে গেছেন। এরপর থেকেই বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরে এ ভাবে ফেলে রেখেছেন তার ছেলে ও বৌমা।

ওই বৃদ্ধা ইউএনওকে জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি মেয়েদের বাড়িতে থাকতেন। কয়েক দিন আগেও ছিলেন বরিশালে ছোট মেয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে আসেন চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে মেজো মেয়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি বাঁশের ওপর পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। মেয়ের পরিবার খুবই দরিদ্র হওয়ায় তাকে হাসপাতালেও নিতে পারেননি তারা। এমনকি কোনো চিকিৎসাও করা হয়নি। সেখান থেকে জামাই কয়েক দিন আগে ছেলের বাড়িতে রেখে যান।

তিনি আরো জানান, জামাই রেখে যাওয়ার পর থেকে তাকে ছেলে ও বৌমা মিলে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করলেও কোনোরকম সেবাযত্ন করা হয়নি। মেয়ের বাড়িতে ভালোই ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি বার বার বলতে থাকেন, ‘তোমাদের আমার মেয়ে খবর দিয়েছে?’

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা প্রতিবেশী কয়েকজন নারীকে সাথে নিয়ে তাকে ছেলের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে তুলে দেন। এ সময় ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় পুত্রবধূর কাছ থেকে এ মর্মে মুচলেকা নেন যে, ‘বৃদ্ধা আমৃত্যু ছেলের ফ্লাটবাড়ির কক্ষে থাকবেন। কাপড়-চোপড় নষ্ট করে ফেললে ছেলে-পুত্রবধূরা পরিস্কার করে দেবেন। সোমবার আজই বৃদ্ধা মাকে হাসপতালে নিয়ে চিকিৎসা করবেন।’ এ সময় ওই পুত্রবধূ বলেন, আমাদের তাকে ডাক্তার দেখানোর মতো টাকা নেই। তখন তাদের উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, ঘটনাটি খুবই কষ্টদায়ক ও দুঃখজনক। একমাত্র ছেলে নিজের মাকে গোয়াল ঘরে গরুর মলমূত্রের মধ্যে ফেলে রেখেছেন। ওই মাকে ছেলের ঘরে তুলে দেয়া হয়েছে। ডাক্তার দেখানোর জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ছেলে ও পূত্রবধূর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন