English

32 C
Dhaka
শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
- Advertisement -

যে বিদ্যালয়ের নাম বলতে লজ্জা পায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা!

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

যশোর জেলার অন্তত ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিকৃত এসব নাম থাকলেও ডিজিটাল যুগে পরিবর্তন চায় শিক্ষার্থীরা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের মাংগিরপাড়া গ্রামে এলাকবাসীর উদ্যোগে গ্রামের নামে প্রতিষ্ঠা হয় ‘মাংগীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’ ২০১৩ সালে সারাদেশে ২৬ হাজার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের তালিকায়ও ছিল এটি। তবে স্কুলে নামে ‘মাংগীরপাড়া’ শব্দটি নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অস্বস্তি বেশি। নানাসময়ে এটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। অন্য বিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা এই শব্দ নিয়ে বিদ্রুপ করায় অনেকে ভর্তিই হতে চায় না এখানে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে মাত্র ৬৬ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী চায় বিদ্যালয়ের নামটি পরিবর্তন করা হোক।
শুধু মাংগীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, যশোর জেলায় আরও অনেকগুলো বিদ্যালয় রয়েছে, যার নাম শ্রুতিমধুর নয়। এমন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তালিকা করতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তালিকা প্রস্তুত করবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় শ্রুতিমধুর নয়, এমন অন্তত ২৫টি বিদ্যালয়ের নাম পাওয়া গেছে। শ্রুতিকটূ এসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হলো- যশোরের চৌগাছা উপজেলার মাংগীরপাড়া, গুয়াতলী, কাদবিলা ঝাউতলা, আড়ারদহ নিমতলা, চুটারহুদা, বাজে খড়িঞ্চা, আগমপুর হোগলডাঙ্গা, মশ্মমপুর, তজবীজপুর ও পেটভরা।
সদর উপজেলার শ্রীপদ্দি, জোত রহিম, টিকেজি সম্মিলনী, নোঙরপুর, মাথাভাঙ্গা ও সিরাজসিংহা তরফদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কেশবপুরের গড়ভাঙ্গা মাঝপাড়া, নেপাকাটি, পাত্রপাড়া। অভয়নগর উপজেলার আদিলপুর বিভাগদি, কলারাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মণিরামপুরের চেৎলা ডুমুরখালী, হানুয়ার কোমলপুর, সুন্দ্রা ও বিবিজিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ ছাড়া আরও বেশকিছু বিদ্যালয় রয়েছে। যাচাই শেষে জেলা শিক্ষা অফিসের চূড়ান্ত তালিকায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এসব নামকরণ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর আপত্তি আছে।
এ প্রসঙ্গে মাংগীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের নামটি বিব্রতকর। শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাইকে প্রতিনয়ত অস্বস্তিতে পড়তে হয়। যে কেউ নামটি শুনলে পাল্টা প্রশ্ন করেন এমন নাম হয় নাকি? বেশিরভাগ মানুষ বিদ্যালয়ের নাম শুনে হাসাহাসি করেন। কোমলমতি শিশুরাও প্রতিনিয়ত বিদ্রুপের শিকার হন। অন্য বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের বিদ্রুপ করে। কোমলমতি শিশুরা মন খারাপ করে। অনেকেই বিদ্যালয়ে পড়তে চায় না। এ ছাড়া গ্রামে লোকসংখ্যা তুলনামূলক কম। সবমিলিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যাও কম, আমরা আছি বিপাকে।
প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমান বলেন, তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। কয়েকবার বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু হয়নি। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ চায় নামটি পরিবর্তন হোক। এই অস্বস্তি থেকে সবাই মুক্তি চায়। মানুষের উপহাসের পাত্র আর কেউ হতে চায় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি, যাতে দ্রুত নাম পরিবর্তন সম্ভব হয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, যশোরের ৮ উপজেলায় এক হাজার ২৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক জাতীয়করণকৃত। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে, শ্রুতিমধুর নয় এমন বিদ্যালয়ের তালিকা করবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। এরপর জেলার চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, মাংগিরপাড়া বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি অবহিত। নাম পরিবর্তন করে শ্রুতিমধুর করা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাম্মী ইসলাম জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশের যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিমধুর নয়, সেসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নতুন করে নাম রাখা হবে। সে নাম হবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে শ্রুতিমধুর। এ লক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক ( পলিসি ও অপারেশন) খালিদ আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠি এসেছে। চিঠিতে শ্রুতিমধুর নাম নয়, এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামের তালিকা পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শ্রুতিমধুর নাম নয়- এমন বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার কাজটা সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। কারণ শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল না রেখে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে, সেগুলোতে পড়তে বিব্রতকর লাগে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন