গ্রীষ্মকাল মানেই আমের মৌসুম। আম শুধু একটি ফল নয়, এটি বাঙালির আবেগ। স্বাদে অতুলনীয় এই ফলটির যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খেয়ে ফেললেও ক্ষতির কারণও হতে পারে। চলুন জেনে নেই আম খাওয়ার লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে।
আমের উপকারিতা
পুষ্টিগুণে ভরপুর: আম ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফোলেট, পটাশিয়াম এবং ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
হজমশক্তি বৃদ্ধি: আমে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে থাকা এনজাইম খাদ্য হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য: ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আম ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বককে টানটান রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: আমে ম্যাংগিফেরিন, ক্যারাটিনয়েডস এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: আমের পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা: ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় আম দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
আমের অপকারিতা
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: আমে প্রাকৃতিক শর্করা (চিনি) বেশি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত আম সেবন রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে আম খাওয়া উচিত।
ওজন বৃদ্ধি: আমের ক্যালোরি তুলনামূলকভাবে বেশি। অতিরিক্ত আম খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
পেটের সমস্যা: বেশি পরিমাণে আম খেলে কারো কারো হজমের সমস্যা, যেমন ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে যাদের ফলিক অ্যাসিড সংবেদনশীলতা রয়েছে।
এলার্জি: কিছু মানুষের আমে এলার্জি থাকতে পারে। ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা মুখ ফুলে যাওয়া এর সাধারণ লক্ষণ। আমের খোসায় থাকা ‘উরুশিওল’ নামক একটি যৌগ এই এলার্জির জন্য দায়ী হতে পারে।
কৃত্রিমভাবে পাকানো আম: বাজারে অনেক সময় কার্বাইড বা অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার করে আম পাকানো হয়। এই ধরনের আম খেলে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, এমনকি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হতে পারে। তাই আম কেনার সময় সতর্ক থাকুন।
গরমের সমস্যা: আম কিছুটা গরম প্রকৃতির ফল। অতিরিক্ত আম খেলে শরীর গরম হতে পারে এবং ব্রণ বা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পরিমিত সেবনই আসল কথা
আম নিঃসন্দেহে একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। তবে এর সকল উপকারিতা পেতে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে, পরিমিত পরিমাণে আম খাওয়া জরুরি। ডায়াবেটিস রোগী এবং যাদের ওজন বেশি, তাদের আম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাকৃতিক উপায়ে পাকানো আম কিনুন এবং খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।