চোখ মানবদেহের অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও মূল্যবান অঙ্গ। অথচ চোখের যত্নের ক্ষেত্রে অনেকেই অবহেলা করে থাকেন। দৈনন্দিন জীবনে নানা ছোটখাটো সমস্যার মধ্যে চোখ ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন একটু সতর্কতা ও সচেতনতা। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ এবং ফলপ্রসূ হয়। তাই চোখের নিয়মিত রুটিন চেকআপ করানো অত্যন্ত জরুরি।
চোখের অনেক সমস্যা রয়েছে, যেগুলো শুরুতে বোঝা যায় না, কিন্তু পরীক্ষা করলে সহজেই শনাক্ত করা যায়। পাশাপাশি চোখের পাওয়ার বা দৃষ্টিশক্তি সঠিক আছে কি-না, তা-ও পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চশমা ব্যবহার করা উচিত। যদি কারও চোখে রিফ্র্যাকটিভ এরর থাকে, অর্থাৎ দূরে বা কাছে দেখতে সমস্যা হয়, তাহলে তা চশমার মাধ্যমে সংশোধন করে নেওয়া জরুরি। চশমার পাওয়ার ঠিকঠাক থাকলে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়; কিন্তু যদি দৃষ্টিতে ঝাপসা লাগা, চোখে চাপ পড়া বা মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করা উচিত।
এখন মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু একটানা দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে কাজ করলে চোখের ওপর অযথা চাপ পড়ে। তাই আধঘণ্টা পর পর অন্তত এক-দুই মিনিট চোখ বন্ধ রাখুন বা দূরে তাকিয়ে চোখ বিশ্রাম দিন। কাছের দিকে ক্রমাগত তাকিয়ে থাকলে চোখের সিলিয়ারি পেশিতে টান পড়ে, কিন্তু দূরে তাকালে চোখ কিছুটা রিলাক্স হয়। এই ছোট বিরতিগুলো দীর্ঘ সময় কাজ করলেও চোখকে সুরক্ষিত রাখে। একটানা স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে অনেকে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে জ্বালা এবং পানি পড়ার মতো সমস্যায় ভোগেন। একে বলে ‘ড্রাই আই সিনড্রোম’। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের আলো চোখ শুষ্ক করে তোলে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে দ্রুত চোখের পলক ফেলুন, ঘন ঘন চোখ বন্ধ-খোলার মাধ্যমে চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকে।
তবু যদি চোখে ড্রাইনেস অনুভূত হয়, তবে দিনে চার-পাঁচবার লুব্রিকেটিং আইড্রপ বা টিয়ারড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি দিনে কয়েকবার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিলে চোখ সতেজ অনুভব করবে। চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সঠিক ভঙ্গিমায় বসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাত হয়ে বা শুয়ে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা উচিত নয়, এতে চোখের ওপর আরও বেশি চাপ পড়ে। পুষ্টির ক্ষেত্রেও চোখের আলাদা কোনো খাদ্যতালিকা নেই; বরং একটি সুষম আহারই চোখকে সুস্থ রাখতে যথেষ্ট। তবে ডায়েটে ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ খাবার রাখা ভালো। কারণ এগুলো চোখের রেটিনা ও কর্নিয়া সুস্থ রাখতে সহায়ক।
যারা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাদের টানা আট ঘণ্টার বেশি লেন্স পরে থাকা উচিত নয়। নির্দিষ্ট সময় পর লেন্স খুলে চোখ কিছুটা বিশ্রাম দিয়ে আবার ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে মোবাইল ও কম্পিউটার স্ক্রিনে বিভিন্ন ধরনের প্রটেকটিভ লেয়ার থাকে, যা চোখের ক্ষতির আশঙ্কা অনেক কমিয়ে দেয়। তা সত্ত্বেও অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্রাইটনেস ব্যবহার করা উচিত নয়। চোখ যেন আরাম অনুভব করে, সে অনুযায়ী স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে নেওয়া ভালো। চোখ আমাদের দেহের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গ; তাই সামান্য অসাবধানতায় বড় ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সচেতনতা, নিয়মিত পরীক্ষা এবং যথাযথ যত্নই চোখকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে সক্ষম।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন
আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
