সৌন্দর্য বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছে মানুষ। এরই অংশ হিসেবে শরীরের অবাঞ্চিত লোম অপসারণের চিকিৎসার জনপ্রিয়তা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রেজার ও ওয়াক্সিং কিট থেকে শুরু করে উচ্চ-প্রযুক্তির লেজার পদ্ধতি পর্যন্ত অবলম্বন করছে মানুষ। তবে এসব চিকিৎসাগুলো কি আসলেই কাজ করে এবং ত্বকের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ডার্মাটোলজিক্যাল হেলথ ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের একটি বিশ্বব্যাপী জরিপে দেখা গেছে যে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ৭০ শতাংশের বেশি নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ অবাঞ্চিত লোম অপসারণের কোনো না কোনো পদ্ধতিতে জড়িত, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক লেজার হেয়ার রিমুভাল বা ইনটেন্স পালসড লাইট (আইডিএল)-এর মতো আধা-স্থায়ী বা স্থায়ী পদ্ধতি বেছে নেন।
কার্যকারিতা পদ্ধতি অনুসারে পরিবর্তিত
শেভিং ও ওয়াক্সিংয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিগুলো সহযলভ্যতা ও সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে শেভিং কেবল ত্বক থেকে লোম সরিয়ে দেয়। আর ওয়াক্সিং এটিকে গোড়া থেকে টেনে বের করে এবং এটি পুনরায় গজাতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মতো সময় লাগে।
লেজার হেয়ার রিমুভালের মতো আরও স্থায়ী পদ্ধতিগুলোতে বৃদ্ধি ব্যাহত করার জন্য আলো দিয়ে চুলের ফলিকলগুলো লক্ষ্য করে কাজ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লেজার চিকিৎসা ৬ থেকে ৮টি সেশনের পরে চুলের বৃদ্ধি ৭০-৯০ শতাংশ কমাতে পারে, যা লোমের ধরণ, ত্বকের রঙ এবং হরমোনের অবস্থার ওপর নির্ভর করে।
লেজারের কম শক্তিশালী বিকল্প, আইপিএলও (ইন্টেন্স পালসড লাইট) জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যদিও এটি ততটা সুনির্দিষ্ট নয়, তবে এটি কালো চুল বা লোমের সঙ্গে থাকা হালকা ত্বকের জন্য কার্যকর হতে পারে, ধারাবাহিক চিকিৎসার মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসৃণ ফলাফল দেয়।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
লোম অপসারণে ফলে মসৃণ ও পরিস্কার ত্বক পাওয়া যায়। তবে এর সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোও কম নয়।
১. সঠিক কৌশল ছাড়া শেভিং রেজার ব্যবহার করলে জ্বালাপোড়া এবং কেটে যেতে পারে।
২.ওয়াক্সিং স্বাস্থ্যবিধি বজায় না রাখলে লালভাব, প্রদাহ এবং বিরল ক্ষেত্রে সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
৩. ডিপিলেটরি ক্রিমগুলোতে এমন রাসায়নিক থাকে যা সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
৪. লেজার চিকিৎসা লালভাব, অস্থায়ী ফোলাভাব বা রঞ্জক পরিবর্তনের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে কালো ত্বকের রঙে।
চর্মরোগ সংক্রান্ত গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে যে, ঘন ঘন বা আক্রমণাত্মকভাবে লোম অপসারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে হাইপারপিগমেন্টেশন বা দীর্ঘস্থায়ী জ্বালা হতে পারে।
ফলাফল কি স্থায়ী?
কোনো পদ্ধতিই ১০০ শতাংশ স্থায়ী লোম অপসারণের গ্যারান্টি দেয় না। লেজার এবং আইপিএল চিকিৎসা লোমের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে তবে প্রতি ৬ থেকে ১২ মাস অন্তর রক্ষণাবেক্ষণ সেশনের প্রয়োজন হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তন, জেনেটিক্স এবং ওষুধের কারণেও লোম পুনরায় গজাতে পারে।
জার্নাল অফ অ্যাসথেটিক মেডিসিন (২০২৪)-এ প্রকাশিত ক্লিনিকাল তথ্য অনুসারে, লেজার থেরাপির সম্পূর্ণ সেশনের পরেও তরুণ ব্যক্তি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের লোম বৃদ্ধি পেতে পারেন।
সঠিক চিকিৎসা নির্বাচন
বিশেষজ্ঞরা ত্বকের ধরণ, চুলের গঠন, চিকিৎসা ইতিহাস এবং বাজেটের ওপর ভিত্তি করে চুল অপসারণ পদ্ধতি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন। উদাহরণস্বরূপ:
সংবেদনশীল ত্বক: ছাঁটাই বা সুগারিং (ওয়াক্সিংয়ের একটি প্রাকৃতিক বিকল্প) বেছে নিন।
ঘন বা মোটা লোম: লেজার দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল দিতে পারে।
বাজেট: শেভিং এবং ওয়াক্সিং খরচ অনুযায়ী কার্যকর কিন্তু আরও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন।
তাছাড়া, জটিলতা এড়াতে এবং উপযুক্ততা নিশ্চিত করতে লেজার বা রাসায়নিক-ভিত্তিক চিকিৎসা শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।