বয়স বাড়লেও শরীর-মন যেন থাকে তরতাজা এটাই তো সবার প্রত্যাশা। আর সেই প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হতে পারে প্রতিদিনের কফির কাপ।
সম্প্রতি আমেরিকান সোসাইটি ফর নিউট্রিশনের বার্ষিক সম্মেলনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশনাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. সারা মাহদাভির নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বয়সে প্রতিদিন এক থেকে তিন কাপ ক্যাফেইনযুক্ত কফি পানকারী নারীরা বার্ধক্যে কাটিয়ে অনেকটা সুস্থ ছিলেন।
তারা বড় কোনো অসুস্থতা ছাড়াই ছিলেন শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সুস্থ থেকেছেন।
এই গবেষণাটি করা হয়েছে ‘নার্সেস হেলথ স্টাডি’ থেকে নেয়া ৪৭ হাজার নারীর খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করে।
তাদের মধ্য বয়সে তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তী ৩০ বছর ধরে তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
সব ধরনের ক্যাফেইন নয়, শুধু কফি: গবেষণায় দেখা গেছে, কফির এই উপকারিতা শুধু ক্যাফেইনযুক্ত কফির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
চা, ডিক্যাফ কফি বা কোলা জাতীয় অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়তে এই উপকার পাওয়া যায়নি। বরং কোলা বা সফট ড্রিংক বেশি পান করলে সুস্থ বার্ধক্যের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. ডেভিড কাও জানান, এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ক্যাফেইন নয়, বরং কফির মধ্যেই রয়েছে স্বাস্থ্য রক্ষাকারী উপাদান।
গবেষণাটি যদিও পর্যবেক্ষণমূলক, অর্থাৎ এটি সরাসরি কারণ-ফল নির্ধারণ করতে পারে না, তবুও এটিকে মানসম্মত গবেষণা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এতে জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় এনে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ড. মাহদাভির মতে, হরমোনের প্রভাবে শরীরে ক্যাফেইনের প্রভাব বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থা, মেনোপজ কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণের সময় ক্যাফেইনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
তাই যারা কফি খাচ্ছেন না তাদের যে তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না এমন নয়। তবে যারা আগে থেকেই কফি খান, তাদের জন্য এটি স্বস্তির বার্তা কফি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে না বরং সহায়ক হতে পারে।
কাদের জন্য সাবধানতা জরুরি: যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, উদ্বেগ বা ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের অবশ্যই কফি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন এই সমস্যাগুলো বাড়াতে পারে। টিউলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লু কিও মনে করেন, সকালের দিকে কফি পান করা স্বাস্থ্যকর হতে পারে, তবে দিনের অন্যান্য সময় কফি পান করলে এর সুফল কমে যেতে পারে।
সুস্থ বার্ধক্য অর্জনে কফি হয়তো সহায়ক, তবে একমাত্র উপায় নয়। ভালো খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম এই উপাদানগুলো একসঙ্গে কাজ করলেই দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পাওয়া সম্ভব।