English

31 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫
- Advertisement -

জ্বরে জিহ্বায় স্বাদ পাচ্ছি না, কীসের লক্ষণ?

- Advertisements -

আমাদের জীবনে খাবারের স্বাদ শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়, আনন্দ ও তৃপ্তির একটি বড় উৎস। কিন্তু অনেকেই হঠাৎ করে লক্ষ্য করেন, পছন্দের খাবারের স্বাদ যেন ম্লান হয়ে গেছে বা একেবারেই নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘এজিউসিয়া (Ageusia) বা স্বাদহীনতা’। এটি নানা কারণে হতে পারে, সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে বড় কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে। সঠিক কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসা করলে অনেক সময়ই স্বাদ ফিরে পাওয়া সম্ভব, যদিও কিছু ক্ষেত্রে তা স্থায়ী হতে পারে।

স্বাদ হারানোর কারণসমূহ: চিকিৎসকরা জ্বরের পর কিংবা জ্বরের সময় খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা স্বাদ হারানোর বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. কোভিড-১৯ সংক্রমণ

কোভিড-১৯ এর প্রভাবের কারণে স্বাদ ও গন্ধ হারানো সবচেয়ে আলোচিত কারণগুলোর মধ্যে একটি। ভাইরাসটি আপনার মুখের টেস্ট বার্ড ও নাকের গন্ধগ্রাহী কোষে প্রবেশ করে তাদের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে, মুখের ইপিথেলিয়াল কোষে উপস্থিত ‘অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম টু (এইসি টু)’ রিসেপ্টরগুলোই ভাইরাস প্রবেশের পথ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড আক্রান্তের মধ্যে ৭শতাংশ স্বাদ হারায় এবং বেশিরভাগই ১৪ দিনের মধ্যে স্বাদ ফিরে পায়।

২. অন্যান্য ভাইরাসজনিত সংক্রমণ

সর্দি, কাশিসহ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ যেমন ফ্লু বা সাধারণ ঠান্ডা, নাকের সাইনাসে জমে থাকা সেক্রেশন এবং ফুসকুড়ির কারণে স্বাদগ্রাহী সেলগুলোতে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই ধরনের সংক্রমণ চলাকালীন নাক বন্ধ থাকায় স্বাদ অনুভূতি কমে যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণ সারার পর স্বাদ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

৩. অ্যালার্জি এবং সাইনাস ইনফেকশন

অ্যালার্জির কারণে নাকের ভেতর প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং সাইনাসে ফ্লুইড জমে যেতে পারে, যা গন্ধ ও স্বাদকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘস্থায়ী সাইনুসাইটিস বা ফুসকুড়িও স্বাদের সমস্যা বাড়াতে পারে। এই ক্ষেত্রে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার রাখা এবং চিকিৎসা গ্রহণ স্বাদ ফিরে পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৪. নাসারন্ধ্রের পলিপ

নাক বা সাইনাসের নরম ও পেইনলেস টিউমারধর্মী গঠন নাসারন্ধ্রের পলিপ নামে পরিচিত। এগুলো সাধারণত ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন, অ্যালার্জি, অ্যাজমা, পুনরাবৃত্ত সংক্রমণ বা ইমিউন ডিজঅর্ডারের কারণে হয়। পলিপ নাক বন্ধ করে দেয় এবং স্বাদ ও গন্ধ কমিয়ে দেয়। চিকিৎসা হিসেবে ওষুধ বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে, তবে পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

• সাইকোট্রপিক ওষুধ (মেজাজ পরিবর্তনকারী)

• ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ

• অ্যান্টিবায়োটিক

• অ্যান্টিহিস্টামিন

• কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ

এই ওষুধগুলো মুখ শুকিয়ে দেয় বা স্বাদের কোষের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে স্বাদহীনতার কারণ হতে পারে। ওষুধ বন্ধ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৬. ক্যানসারের চিকিৎসা

কেমোথেরাপি এবং মাথা-গলা এলাকায় রেডিয়েশন থেরাপি স্বাদের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এ ধরনের চিকিৎসার সময় স্বাদের ক্ষতি হতে পারে, তবে চিকিৎসা শেষে সাধারণত স্বাদ ফিরে আসে। মুখের শুষ্কতা কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান এবং বিশেষ ধরনের খাবার গ্রহণে সহায়তা পাওয়া যায়।

৭. পুষ্টির ঘাটতি 

বিশেষ করে জিংকের অভাব স্বাদ ও গন্ধের ক্ষতির একটি সাধারণ কারণ। জিংক আমাদের স্বাদের গ্রন্থি ও গন্ধগ্রাহী কোষের জন্য অপরিহার্য। দস্তার অভাবে স্বাদগ্রাহী কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এই জিংক পাওয়া যায় মাংস, মুরগি, বাদাম, ডিম, ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল এবং কিছু শাক-সবজিতে। পুষ্টির ঘাটতি সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ জরুরি।

৮. দাঁতের সমস্যা ও মুখের অবস্থা

দাঁতে ব্যথা, মাড়ির রোগ, মুখের সংক্রমণ স্বাদের উপর প্রভাব ফেলে। মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথা, মুখে দুর্গন্ধ সহ অন্যান্য সমস্যা থাকলে ডেন্টাল চেকআপ করানো উচিত। ভালো মৌখিক স্বাস্থ্য রক্ষা করলেই স্বাদের সমস্যা অনেকাংশে কমে।

৯. বার্ধক্য ও স্নায়বিক রোগ

বয়স বাড়ার সঙ্গে স্বাদের অনুভূতিতে স্বাভাবিক ক্ষয় দেখা দেয়, তবে সম্পূর্ণ স্বাদ হারানো স্বাভাবিক নয়। আলঝেইমার ও অন্যান্য ডিমেনশিয়া রোগেও স্বাদের ক্ষতি হতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সীমিত হলেও খাদ্য পরিকল্পনা ও সঠিক পরিচর্যা সাহায্য করে।

১০. রাসায়নিক, মাথায় আঘাত এবং অন্যান্য কারণ

কিছু রাসায়নিক যেমন উচ্চ মাত্রার কীটনাশক শরীরে প্রবেশ করলে স্বাদ ও গন্ধের ক্ষতি হতে পারে। মাথায় আঘাত স্বাদের কেন্দ্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া ধূমপান, মদ্যপান ও জিহ্বা পুড়ে যাওয়াও স্বাদের ক্ষতি করে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন: যদি স্বাদহীনতা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা হঠাৎ হয়, বা অন্য কোনো লক্ষণ যেমন সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা ইত্যাদির সঙ্গে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে শারীরিক পরীক্ষা, রোগের ইতিহাস এবং প্রয়োজনে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দেবেন। তারা স্বাদ পরিমাপের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন।

স্বাদ ফেরানোর উপায়

• মূল রোগ বা সমস্যা সঠিকভাবে চিকিৎসা করা;

• পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা;

• মুখ পরিচ্ছন্ন রাখা, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা ও ফ্লস ব্যবহার করা;

• ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন কমানো বা বন্ধ করা;

• দস্তা-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ;

• মশলা ও হার্বসের মাধ্যমে খাবারে বৈচিত্র্য আনা;

• ক্যানসারের চিকিৎসার সময় ঠান্ডা খাবার খাওয়া এবং মুখের শুষ্কতা কমানোর পণ্য ব্যবহার করা।

স্বাদহীনতা একটি অস্বস্তিকর সমস্যা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সাময়িক এবং মূল সমস্যার চিকিৎসা করালে স্বাদ ফিরে আসে। তবে দীর্ঘস্থায়ী বা হঠাৎ স্বাদ হারানো শরীরের গুরুতর সংকেত হতে পারে, যা অবহেলা করা উচিত নয়। তাই সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং নিজস্ব যত্ন নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং মনোযোগী স্বাস্থ্যপরিচর্যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাদের আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/0wbl
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন