কোলন ক্যানসার এখন আর ছোট-বড় কোনো ভেদাভেদ নেই। যে কোনো বয়সেই হচ্ছে কোলন ক্যানসার। যদিও একটা সময় ছিল বয়স্কদের রোগ কোলন ক্যানসার। বয়স ৫০ পার হলেই এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেত। চিকিৎসকরাও তাই মূলত বয়স্কদের ক্ষেত্রেই কোলন ক্যানসারের আশঙ্কার কথা বলতেন। কিন্তু এখন সে রোগ তরুণদের মাঝেও বাড়ছে।
সাম্প্রতিক এমন চিত্রই দেখা গেছে, যা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। সেখানে বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যেই বাড়ছে কোলন ক্যানসার। মাত্র ৩০ কিংবা ৪০-এর কোঠায় পা দিতেই অনেক তরুণ এখন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আগামী দুই দশকে যদি জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না আসে, তবে ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতি বছর নতুন করে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে প্রায় ৩২ লাখে। আর মৃত্যু হতে পারে ১৬ লাখের বেশি মানুষের। তবে আশার খবর হলো— কিছু নিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনলে কোলন ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পাওয়া সম্ভব।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের মধ্যে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ১৯৫০ সালের প্রজন্মের তুলনায় দ্বিগুণ। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন করে কোলন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ মানুষ, একই সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ লাখ ৩০ হাজার মানুষ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে কোলন ক্যানসার নিয়ন্ত্রণযোগ্য—
১. অ্যালকোহল সেবন
মদপান অন্তত সাত ধরনের ক্যানসারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে কোলন ক্যানসারও রয়েছে। দীর্ঘদিন অ্যালকোহল খেলে ঝুঁকি ৩০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ফলে যে কোনো ধরনের অ্যালকোহল পান বন্ধ করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।
২ . ধূমপান
তামাক ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ২৫ শতাংশ ক্যানসারজনিত মৃত্যুর জন্য দায়ী। এর ফলে দীর্ঘদিন ধূমপান করলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ও মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। আর ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং ও সহায়তা নেওয়াই হচ্ছে এর সমাধান।
৩. অলস জীবনযাপন
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কোলন ক্যানসারের একমাত্র অন্যতম বড় কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এ ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যায়। যদি নিয়মিত ব্যায়াম করতে না পারেন, তবে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করা উচিত। হাঁটা, সাইকেল চালানো বা সিঁড়ি ব্যবহার করাও কার্যকর।
৪. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া উচ্চ তাপে ভাজা বা গ্রিল করা মাংসও ক্ষতিকর। সে কারণে সবুজ শাকসবজি, ফল, আঁশযুক্ত শস্য বেশি খাওয়া এবং লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত করাই এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
৫. অতিরিক্ত ওজন
আপনার অতিরিক্ত ওজন শুধু সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, এটি ক্যানসারের অন্যতম বড় ঝুঁকি। স্থূলতা শরীরে প্রদাহ, কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং রক্তনালির গঠনে প্রভাব ফেলে, যা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমানো উচিত।
