থাইরয়েড কী
থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনের দিকে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় বাইরে থেকে এর অবস্থান বোঝা যায় না।
কারণ কী
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া কিংবা এখানে কোনো গোটা থাকার কারণ কিন্তু টিউমার বা ক্যান্সার নয়, অন্য কোনো কিছুও হতে পারে। তবে থাইরয়েডে এমন কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। থাইরয়েড দেহের সব বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। সার্বিক সুস্থতার জন্যই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমে এই গোটা বা ফোলার কারণ নির্ণয় করা হয়।
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক গোটাটিকে পরীক্ষা করে দেখার সময়ই একটা ধারণা পেয়ে যান, এটি ক্যান্সারজাতীয় কিছু কি না। তবে ক্যান্সার সন্দেহ হলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এফএনএসি করাতে হবে। এফএনএসি নির্দিষ্ট সুইয়ের সাহায্যে কোষ নিয়ে পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি। আর থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা নির্ণয় করতে আলাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়।
টিউমারের ধরন
থাইরয়েডের টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি নিরীহ ধরনের টিউমার, অন্যটি ক্যান্সার। ক্যান্সারের আবার কয়েকটি ধরন থাকে। থাইরয়েড ক্যান্সারের সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তার সম্পর্ক রয়েছে। শৈশবে তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এলে থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
চিকিৎসা
থাইরয়েড ক্যান্সার আমাদের দেশের পরিচিত একটি সমস্যা। থাইরয়েডে ক্যান্সার ধরা পড়লেই ভেঙে পড়বেন না। মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত রাখুন। দেশেই এর চিকিৎসা সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা গেলে বেশির ভাগ ক্যান্সারই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তাই চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে থাইরয়েড গ্রন্থি সম্পূর্ণ ফেলে দেওয়া হলে পরে থাইরয়েড হরমোনের ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হয় প্রতিদিন। কিন্তু ক্যান্সারের চিকিৎসা করানো না হলে তা মারাত্মক জটিল আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি হয়ে উঠতে পারে জীবননাশেরও কারণ। থাইরয়েড গ্রন্থির পুরোটাই ফেলে দিতে হবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, থাইরয়েডে আক্রান্তরা কি গরম পানি খেতে পারেন? চলুন, জেনে নিই—
বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইরয়েডে গরম পানি খেলে ওজন বাড়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যদিও এই কথার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পুরোপুরি পাওয়া যায়নি। তবে গরম পানি অনেক সমস্যার সমাধানে কার্যকর হতে পারে। আরো উপকার পেতে চাইলে, গরম পানির সঙ্গে লেবু, মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
থাইরয়েডে গরম পানির কী উপকার
প্রথমেই পেটের সমস্যা দূর করে। চিকিৎসকদের মতে, থাইরয়েডে হজম সংক্রান্ত সমস্যা খুবই সাধারণ। এই অবস্থায় গরম পানি খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। নিয়মিত গরম পানি খেলে হজমের সমস্যা অনেকটা কমে যায়। ফলে পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজমের মতো সমস্যাগুলোও কমে আসে। থাইরয়েডে গরম পানি খেলে আর কী কী উপকার পাবেন?
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি : থাইরয়েডের সমস্যায় সাধারণত রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা থাকে না, তবে গরম পানি খেলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত হয়। গরম পানি খেলে শরীরের রক্তনালিগুলো প্রসারিত হয়, ফলে রক্ত চলাচল আরো ভালোভাবে হতে পারে।
শরীর ডিটক্সিফাই করে : বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন গরম পানি খেলে শরীরের ভেতরের ময়লা ও টক্সিন পরিষ্কার হয়ে যায়। গরম পানি শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে এই ময়লা বের করে দেয়, ফলে শরীরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ কমে যায় এবং নানা ধরনের রোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : গরম পানি খেলে থাইরয়েড রোগীদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। গরম পানি শরীরে এনার্জি লেভেল বাড়ায়, যার ফলে নানা ধরনের রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সহজ হয়। তবে মনে রাখতে হবে, যদি আপনার শরীরে অন্য কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।