দৈনিক মাত্র ৭ হাজার ধাপ হাঁটার মাধ্যমে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমানো সম্ভব। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ল্যানসেট পাবলিক হেলথ নামক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার পা হাঁটা স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে বলা হয়, ৭ হাজার পা হাঁটলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ৫৭টি আলাদা গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করেন, যাতে অংশ নেন ১ লাখ ৬০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক। এতে দেখা যায়, প্রতিদিন ৭ হাজার পা হাঁটার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ, ক্যানসার ৬ শতাংশ, বিষণ্নতা ২২ শতাংশ, ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) ৩৮ শতাংশ এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
গবেষণা বলছে, ১০ হাজার ধাপ হাঁটার প্রচলিত ধারণা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। বরং কম ধাপেই উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া সম্ভব। যারা আগে থেকেই ১০ হাজার ধাপ হাঁটার অভ্যাসে আছেন, তাদের সেই অভ্যাস ধরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হলেও যারা এখনও অক্রিয়, তারা যেন অন্তত ৭ হাজার পা হাঁটার লক্ষ্য ঠিক করেন।
এই গবেষণার প্রধান লেখক, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মেলোডি ডিং জানান, একেবারে নিষ্ক্রিয় থাকাদেরও উৎসাহিত করা উচিত ধাপে ধাপে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে। এমনকি প্রতিদিন মাত্র ২ হাজার ধাপ হাঁটলেও তা কিছুটা হলেও উপকার বয়ে আনবে।
আরও দেখা গেছে, প্রতিটি অতিরিক্ত ১ হাজার পা হাঁটার মধ্যেই রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারের বাড়তি সুযোগ। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, দৈনিক ৪ হাজার ধাপ হাঁটলেও অনেক রোগের ঝুঁকি কমে যায়—বিশেষ করে যারা প্রায় নিস্ক্রিয় জীবনযাপন করেন, তাদের জন্য।
ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য গবেষক ড. ড্যানিয়েল বেইলি বলেন, এই গবেষণা ১০ হাজার ধাপের প্রচলিত লক্ষ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেখিয়েছে যে, স্বাস্থ্য রক্ষায় অল্প হাঁটাই যথেষ্ট হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. থিওডোর স্ট্রেঞ্জ বলেন, হাঁটা কেবল শারীরিক কসরত নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ এরোবিক কার্যকলাপের অংশ। তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় হাঁটার জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ প্রতি মাইল ১৫ মিনিট গতিতে হাঁটে, তাহলে ৭ হাজার পা হাঁটতে তার এক ঘণ্টারও কম সময় লাগবে।
গবেষণার সারবস্তু হলো—শরীর সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি, আর সেটা যতটা সম্ভব নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমেই শুরু করা যায়।