খাদ্যাভ্যাস আমাদের সুস্থতা কিংবা অসুস্থতায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক খাবার যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে, তেমনই ভুল কিছু খাবার আবার বিভিন্ন অসুখের কারণ হতে পারে।
পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন এমন কারো জন্য খাবারের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ কিছু খাবার এই সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। চলুন, তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কোন খাবারগুলো পাইলসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর—
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার
বিভিন্ন মসলার বিভিন্ন গুণ আছে, একথা সত্যি। তবে তা খেতে হবে পরিমিত। বিশেষ করে যারা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খুবই ক্ষতিকর। এ ধরনের খাবার পাইলসের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যতই লোভনীয় হোক, এড়িয়ে চলতে হবে মসলাদার খাবার। কারণ এ ধরনের খাবার আপনার হজমে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে পাইলসের সমস্যায় আরো ভুগতে হতে পারেন।
ডুবো তেলে ভাজা খাবার
ডুবো তেলে ভাজা খাবার আসলে কারো জন্যই ভালো নয়।
অতিরিক্ত চা ও কফি
দিনে এক বা দুই কাপ চা কিংবা কফি ঠিক আছে।
অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
এ ধরনের খাবার সবার শরীরের জন্যই ক্ষতিকর। আর আপনার যদি পাইলস আগে থেকেই থেকে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। এ ধরনের খাবার খেলে তা হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। যে কারণে বেড়ে যায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। প্রক্রিয়াজাত খাবারে ফাইবার কম থাকে। এর ফলে তা হজমে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। এর পরিবর্তে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
পাইলসের রোগীরা কী খাবেন আর কী খাবেন না, জেনে নিন এক নজরে—
- চা বা কফির খাওয়া পুরোপুরি রূপে বন্ধ করুন। বাইরের গরম/ঠাণ্ডা পানীয় পান করা বন্ধ করুন।
- টক খাবার (তেতুল ,লেবু, আচার, টমেটো, দই, কমলালেবু, লেবু,ভিনিগার ইত্যাদি) রান্নায় দেবেন না।
- আমিষ খাবার, যেমন ডিম পুরোপুরিভাবে গ্রহণ করবেন না।
- কোনরকম মরিচ (লাল, সবুজ, লঙ্কার গুঁড়া) এবং মজাদার খাবার গ্রহণ করবেন না।
- কোনোরকম অতিরিক্ত ভাজা ও তেলযুক্ত খাবার খাবেন না। সেদ্ধ খাবার খেতে পারেন।
- কোনরকম ভারী পালস, যেমন কাল গ্রাম (ইউ আর ডি), কিডনি গ্রাম (রাজমাহা), লোব্যিয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
- অ্যালকোহল, ধূমপান ও যেকোনো তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে।
- কোনরকম ভারী ব্যায়াম, যেমন ওজন তোলা বন্ধ। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে শয্যাশায়ী হওয়া উচিত নয়।
- বেশি দূরে ভ্রমণ বন্ধ করুন, বেশিক্ষণ বসে থাকুন, প্রতি ১ ঘণ্টার পর ১০ মিনিট হেঁটে নিন। বেশি রাত পর্যন্ত কাজ অথবা জেগে থাকা বন্ধ করুন।
এগুলোর পরিবর্তে
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন (দিনে ৪-৫ লিটার)।
- ৫০ থেকে ১০০ মিলিলিটার মুলার শরবত দিনে তিনবার করে পান করুন।
- মূলা ও গাজর অবশ্যই খাবারে অথবা সালাদের সঙ্গে গ্রহণ করুন।
- হালকা ও তরল খাবার, যেমন মুগ ডাল (গ্রিন গ্রামস), অড়হড় ডাল (হলুদ ডাল), ভাত ইত্যাদি।
- প্রস্তাবিত খাবারের রুটিন
ব্রেকফাস্ট : ডালিয়া /সবজি/ ফলের সালাদ ইত্যাদি খেতে পারেন।
দুপুরের খাবার : অল্প শক্ত মিশ্রণের (খিচুড়ি) ভাত ও মুগ ডাল দুপুরের খাবার হিসেবে খেতে পারেন।
রাতের খাবার : মুগ ডাল/সবজি এবং ভাত/রুটি হাফ চামচ বাড়িতে বানানো মাখন সবজিতে যোগ করে রাতে খাবার হিসেবে খেতে পারেন। সব রকম খাবার অবশ্যই মসলা, মরিচ ও তেল ছাড়া হবে। সিদ্ধ খাবার খাওয়া বেশি প্রস্তাবিত।
এক চামচ ত্রিফলা চূর্ণ অথবা অন্য কোনো পাচক শক্তি বাড়ানোর জিনিস গরম পানিতে অথবা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঘুমানোর আগে গ্রহণ করুন। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত ফল ও সবজি, যেমন পেঁপে, ফিগ, তরমুজ, ডালিম, পেয়ারা ইত্যাদি খান।