English

33.6 C
Dhaka
শনিবার, আগস্ট ২, ২০২৫
- Advertisement -

পুরুষের ক্রোধ কমাতে পারে নারীর অশ্রুর ঘ্রাণ: গবেষণা

- Advertisements -

নারীর অশ্রু পুরুষের ক্রোধ কমাতে পারে, পরিবর্তন আনতে পারে পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবেও ৷ কখনও কি ভেবে দেখেছন, কান্নাকাটি কীভাবে উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে শান্ত করতে পারে? নতুন একটি গবেষণা বলছে, নারীর অশ্রুর ঘ্রাণ কমাতে পারে পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবকে ৷

গবেষকেরা বলছেন, নারীর কান্নার ঘ্রাণে পুরুষের আগ্রাসী মনোভাব অন্তত ৪৪ শতাংশ কমে আসে। গবেষণাটি প্রকাশ করেছে পিএলওএস বায়োলজি। এতে বলা হয়েছে, পুরুষের মস্তিষ্কের যে অংশটি তাকে আক্রমণাত্মক করে তোলে, নারীর কান্নার ঘ্রাণ সেই অংশকে দুর্বল করে দেয়।

মানুষ কেন কাঁদে, তার একটি ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছে এই গবেষণাটি। সেখানে বলা হয়েছে, কান্না সম্ভবত পরিস্থিতিকে শান্ত করার একটি জৈবিক কৌশল।

অশ্রুতে সামাজিক রসায়ন

স্তন্যপায়ী প্রাণীর গবেষণায় দেখা গেছে, চোখের জলে যে রাসায়নিক থাকে, তা সামাজিক সংকেত হিসেবে কাজ করে। আর এর প্রভাবটাও খুব প্রখর।

পুরুষ ইঁদুরের অশ্রুতে এমন একটি রাসায়নিক থাকে, যা নারী ইঁদুরকে যৌনতার প্রতি আরো আগ্রহী করে তোলে। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা ইঁদুরের গর্ভপাতও হতে পারে। অবশ্য, বাবা ইঁদুরের অশ্রুতে এমনটা ঘটবে না।

ইঁদুরের অশ্রুও আগ্রাসী আচরণকেও প্রভাবিত করে। অন্ধ নারী ইঁদুরেরা নিজেদের পুরুষের আগ্রাসী আচরণ থেকে রক্ষায় কান্নার আশ্রয় নেয়। আর নারী ইঁদুরের কান্নায় এমন রাসায়নিক থাকে, যা পুরুষ ইঁদুরের লড়াই থামিয়ে দেয়। আর শিশু ইঁদুরের কাছে আত্মরক্ষার একমাত্র সম্বল কান্না।

কিন্তু মানুষের কান্না কতটা প্রভাব রাখতে পারে, তা স্পষ্ট ছিল না। এই গবেষণার গবেষকেরা আগে দেখিয়েছিলেন, পুরুষ যখন আবেগ আক্রান্ত নারীর অশ্রুর ঘ্রাণ শুঁকে তখন তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়৷ ফলে যৌনতার প্রতি আগ্রহ কমে আসে।

আবেগীয় অশ্রুতে আগ্রাসন কমেছে ৪৪ শতাংশ

এই গবেষণাটির মূল লক্ষ্য ছিল পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষেত্রে কান্নার ক্ষমতা পরীক্ষা করা। ছয়জন নারীর কাছ থেকে অশ্রু সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকেরা। অশ্রু সংগ্রহ করার আগে একটি বিশেষ কৌশল নেয়া হয়। ওই ছয় নারীর সঙ্গী পুরুষদের একটি ভিডিও গেম খেলতে দেয়া হয়, যা তাদের আগ্রাসী মনোভাবকে আরো উসকে দেয়। ওইসময় পুরুষেরা ভিডিও গেমটি খেলছিলেন একটি এমআরআই স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে। এই স্ক্যানার দিয়ে তাদের ব্রেইনের কার্যকলাপগুলো মাপছিলেন গবেষকেরা।

দেখা গেছে, নারীদের কান্নার ঘ্রাণ পেয়ে গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের আগ্রাসী আচরণ ৪৩.৭ ভাগ কমে গেছে। ব্রেইন ইমেজিং পরীক্ষায় দেখা গেছে, কান্নার ঘ্রাণ পেয়ে আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে যুক্ত ব্রেইনের অংশটিও তার কার্যকলাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইজম্যান’স ব্রেইন সায়েন্সেস ডিপার্টমেন্টের বিজ্ঞানী হোয়াম সোবেল এক বিবৃতিতে বলেন,‘আমরা খেয়াল করেছি, অশ্রু ব্রেইনের ঘ্রাণজনিত রিসেপ্টরগুলোকে সক্রিয় করে তোলে, আর আগ্রাসন সম্পর্কিত অংশটিকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে। এতে উল্লেখযোগ্যভাবে আগ্রাসী আচরণ কমে আসে৷’

তিনি আরো বলেছেন, অশ্রু হলো একটি ‘রাসায়নিক রক্ষাকবচ, যা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এই প্রভাবটি ইঁদুর এবং মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রেও সাধারণ বৈশিষ্ট্য হতে পারে।’

শিশুদের প্রসঙ্গটি সামনে এনে তারা বলেন, ভাষাহীন যোগাযোগের (নন-ভারবাল কমিউনিকেশন) ক্ষেত্রে কান্না একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আগ্রাসনের লৈঙ্গিক ফারাক

মানুষের আগ্রাসী আচরণে লিঙ্গ ও যৌনতা কতোটা প্রভাব রাখতে পারে, সেটিও উঠে এসেছে এই গবেষণায়। ২০১৫ সালের সামাজিক ও আচরণগত বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক এনসাইক্লোপেডিয়ায় বলা হয়েছে, লিঙ্গ পার্থক্য ‘মনোবিজ্ঞানের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রাচীনতম আবিষ্কারের একটি।’

আর এই গবেষণা দেখিয়েছে, অশ্রুতে থাকা রাসায়নিকের মাধ্যমে পুরুষের আক্রমণাত্মক আচরণ জৈবিক সংকতে দিয়ে কতোটা পরিবর্তন করা সম্ভব।

গবেষকেরা জানিয়েছেন,‘আমরা জেনেছি, অশ্রুর ঘ্রাণ শুঁকলে টেস্টোস্টেরন কমে, এবং টেস্টোস্টেরন কমে গেলে তা নারীর তুলনায় পুরুষে আগ্রাসী আচরণের উপর বেশি প্রভাব ফেলে। এখন এই প্রভাবের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে নারীদেরও আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, যাতে গবেষণাটি আরো প্রসারিত হয়।’

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/lov3
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন