English

21 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫
- Advertisement -

মাংসপেশির ক্ষয়রোগ সম্পর্কে জেনে রাখুন

- Advertisements -
ডা. এম. ইয়াছিন আলী: সারকোপেনিয়া বা মাংসপেশির ক্ষয়রোগ হলো বয়সজনিত এমন এক অবস্থা, যেখানে ধীরে ধীরে পেশির ভর, শক্তি ও কার্যক্ষমতা কমে যায়। সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের পর থেকে এ ক্ষয় শুরু হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্রতাও বাড়তে থাকে।

সারকোপেনিয়ার প্রধান কারণ হলো বার্ধক্য। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় জড়িত। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভাব, অর্থাৎ শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এ রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পুষ্টিহীনতা, বিশেষ করে প্রোটিন ও ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি সারকোপেনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া হরমোনজনিত পরিবর্তন, যেমন- টেস্টোস্টেরন, গ্রোথ হরমোন ও ইনসুলিনের মাত্রা হ্রাস এ রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি বা ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী রোগ, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন এবং শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থাকলেও সারকোপেনিয়া দেখা দিতে পারে।

সারকোপেনিয়া ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। সাধারণত পেশিশক্তি কমে যাওয়া, শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া, বিশেষ করে মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া, হাঁটার গতি ধীর হয়ে যাওয়া, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা হওয়া এর প্রধান লক্ষণ। চেয়ার থেকে উঠতে, সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হওয়া, ভারসাম্য হারানো বা বারবার পড়ে যাওয়ার ঘটনাও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়।

সারকোপেনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো একক ওষুধ নেই। তবে সঠিক জীবনযাপন ও চিকিৎসার সমন্বয়ের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং পেশিক্ষয় কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যায়াম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর। ওয়েট ট্রেনিং, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড এক্সারসাইজ, স্কোয়াট, লাঞ্জ, পুশ-আপ, নিয়মিত হাঁটা ও হালকা দৌড় পেশিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।

পুষ্টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন- মাছ, মুরগি, ডিম, ডাল ও দুধজাত খাবার নিয়মিত খেতে হবে। পাশাপাশি ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ক্যালরি নিশ্চিত করা জরুরি। প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন থেরাপি উপকারী হতে পারে। মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন থেরাপি ও বিভিন্ন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজও কার্যকর ভূমিকা রাখে।

সারকোপেনিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন অত্যন্ত প্রয়োজন। ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা ও সক্রিয় জীবনযাপন বজায় রাখতে হবে। প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়স পার হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করা উচিত। প্রতিদিন শরীরের ওজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রোটিন (প্রতি কেজি ওজনে ১-১.২ গ্রাম) গ্রহণ করা প্রয়োজন। হাড় ও পেশি শক্ত রাখতে ভিটামিন-ডি এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যেন না থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলো সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং ফিজিওথেরাপিতে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : বাতব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল

ধানমণ্ডি, ঢাকা।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/ys40
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন