অনেকে ভাবেন উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার জন্য দামি ক্রিম, রাসায়নিক উপাদান বা বিদেশি সিরাম ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আসলে ত্বকের প্রকৃত সৌন্দর্য আসে আপনার অভ্যাস, খাবার আর যত্ন থেকে। ঠিক যেমন গাছ বাড়ে আলো, জল আর পরিচর্যায়, তেমনি ত্বকও উজ্জ্বল হয় প্রাকৃতিক উপায়ে, একটু ধৈর্য আর সচেতনতায়।
১. খাদ্যাভ্যাস থেকেই শুরু হোক
আপনার ত্বক কিন্তু শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থারই প্রতিফলন। তাই স্বাস্থ্যকর খাবারই দিতে পারে সুস্থ ত্বক।
২. ত্বকের সহজ যত্ন
জটিল স্কিনকেয়ার রুটিন বা প্রচুর প্রডাক্ট না লাগিয়েও ত্বকের পরিচর্যা সম্ভব। যেমন সকালে হালকা কোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। চালের আটা বা বেসনের মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারলে আরও ভালো। টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন গোলাপ জল বা অ্যালোভেরা জেল। তারপর প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সন্ধ্যাবেলায় সারা দিনের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করার জন্য ভালো একটি ক্লিনজার ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন ও মেকআপ উঠানোর জন্য ওয়েল ক্লিনজার খুব ভালো কাজ করে। ত্বক শুষ্ক হলে রাতে শুতে যাবার আগে ব্যবহার করুন নারকেল তেল বা বাদামের তেল। এসময় হালকা ম্যাসাজ করলে রক্ত চলাচল বাড়ে।
কঠিন রাসায়নিক, কৃত্রিম সুগন্ধি বা অ্যালকোহলযুক্ত সাবান এড়িয়ে চলুন, এগুলো ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. সূর্য থেকে ত্বককে রক্ষা করুন
ভিটামিন-ডিয়ের জন্য সূর্যের আলো দরকার। তবে অতিরিক্ত রোদে থাকলে ত্বকে ট্যান, দাগ বা বয়সের ছাপ পড়ে যেতে পারে। এছাড়া সানবার্নের ঝুঁকিও থাকে। তাই বাইরে বের হলে রোদে ছাতা, টুপি বা ওড়না ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাই-অক্সাইডযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। দুপুর ১১টা থেকে ৩টার মধ্যে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন।
৪. ঘুম ও মানসিক চাপের গুরুত্ব
ঘুমের সময় ত্বক নিজেকে মেরামত করে। তাই ঘুম কম হলে দেখা দেয় ডার্ক সার্কেল, ক্লান্ত ত্বক ও ব্রণ। এজন্য রাতে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, বই পড়া বা ধ্যান করুন। সেই সঙ্গে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন এবং কাজের সময় মাঝে মাঝে বিরতি নিন।
৫. ঘরোয়া প্রাকৃতিক প্রতিকার
ত্বকের যত্নে সপ্তাহে অন্তত একদিন সময় বের করুন। এসময় বাজারের কোনো দামি পণ্য নয়, ঘরে থাকা সাধারণ কিছু উপাদানের মধ্যেই আপনি পেয়ে যাবেন ত্বকের জন্য উপকারী চমৎকার কোনো ফেসপ্যাকের রসদ। যেমন-
মধু: প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, ব্রণের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।
হলুদ: দুধ বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে দাগ হালকা হয়, উজ্জ্বলতা বাড়ে।
ওটস: মৃদু স্ক্রাব হিসেবে কার্যকর।
শসা: ঠান্ডা দেয়, ফোলাভাব কমায়।
তবে যেকোনো উপাদান ব্যবহারের আগে হাতে ছোট্ট জায়গায় পরীক্ষা করে নিন।
৬. ক্ষতিকর অভ্যাস বাদ দিন
ধূমপান ত্বকের অক্সিজেন প্রবাহ কমায়, ফলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায়। চিনি ও জাঙ্ক ফুড ব্রণ ও প্রদাহ বাড়ায়। ত্বকে বারবার হাত দিলে দাগ বা ইনফেকশন হতে পারে। এই ধরণের বদঅভ্যাসগুলো ত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
৭. ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম সারা শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ায় ও ঘামের মাধ্যমে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। তাই সপ্তাহে কয়েকবার হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা কোনো ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
তবে ব্যায়াম করার পর মুখ পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
ত্বকের যত্নে মনোযোগী হয়েও যতি খেয়াল করেন যে, ত্বকে চুলকানি, জ্বালা, অতিরিক্ত ব্রণ বা দীর্ঘদিনের কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। একজিমা, ব্রণ, পিগমেন্টেশন ইত্যাদির জন্য পেশাদার চিকিৎসা দরকার হতে পারে।
সুস্থ, উজ্জ্বল ত্বক কেবল কসমেটিকসের উপর নির্ভর করে না। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস, পরিমিত খাবার, ভালো ঘুম আর কিছু প্রাকৃতিক যত্নই পারে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তুলতে।