শীতকালে গ্রীষ্মের মতো চোখের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি অনেকেই গুরুত্ব দেন না। তবে চিকিৎসকদের মতে, গ্রীষ্মের তুলনায় শীত মৌসুমে চোখের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি থাকে। এ সময় বাতাসে ধুলাবালি ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা বেড়ে যায়, যা চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
শীতের শুষ্ক বাতাস চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে শহর ও শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা এবং দূষিত কণা বাতাসে ভাসমান থাকে। শীতের আনন্দ উপভোগ করতে মানুষ বাইরে বেশি সময় কাটান। ফলে চোখ সরাসরি এই দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে আসে। শিশু এবং যারা বাইরে কাজ করেন, তারা এ ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকেন।
চিকিৎসকেরা জানান, শীতের শুষ্কতার কারণে চোখের কর্নিয়ায় ছোট ছোট ক্ষত তৈরি হতে পারে। এসব ক্ষতস্থানে ধুলাবালি বা জীবাণু সংক্রমিত হলে কর্নিয়ার আলসার হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে এ রোগ দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট করে দিতে পারে।
কর্নিয়ার আলসারের লক্ষণ
চিকিৎসকদের মতে, কর্নিয়ার আলসারের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ রয়েছে—
চোখ প্রচণ্ড লাল হয়ে যাওয়া ও অনবরত পানি পড়া
চোখে তীব্র ব্যথা বা খচখচানি
ঝাপসা দেখা বা আলো সহ্য করতে না পারা
চোখের মণির ওপর সাদাটে দাগ দেখা যাওয়া
কেন বিপজ্জনক কর্নিয়ার আলসার
কর্নিয়া চোখের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বচ্ছ অংশ, যা দৃষ্টিশক্তির জন্য অপরিহার্য। কর্নিয়ার আলসার একটি মেডিকেল জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত। চিকিৎসকেরা জানান, এ রোগের কারণে—
- কর্নিয়ায় স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তিকে স্থায়ীভাবে ঝাপসা করে দেয়
- আলসার গভীর হলে কর্নিয়া ফুটো হয়ে চোখের ভেতরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
- কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পুরো চোখ নষ্ট করে দিতে পারে
- সংক্রমণ চোখের গভীরে ছড়িয়ে পড়লে অস্ত্রোপচার করে চোখ অপসারণের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে
চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়
চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, চোখে এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রপ ব্যবহার করা হয়।
প্রতিরোধের জন্য—
- বাইরে বের হলে সানগ্লাস বা সুরক্ষামূলক চশমা ব্যবহার করা
- চোখে বারবার হাত না দেওয়া
- প্রতিদিন পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নেওয়া
- নিজে নিজে কোনো ওষুধ বা আইড্রপ ব্যবহার না করা
চিকিৎসকদের মতে, শীত মৌসুমে চোখের যত্নে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। সামান্য অবহেলাও দৃষ্টিশক্তির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
