English

24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

সুপারফুড মুগ ডাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

- Advertisements -

স্বাস্থ্যের জন্য ডাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাল আমরা অনেক ধরনের খেয়ে থাকি- ছোলার ডাল, মসুর ডাল, বিউলি, অড়হর ডাল ইত্যাদি। এর মধ্যে একটি হল মুগ ডাল, সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচনা করা হয় আয়ুর্বেদে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মুগ ডালকে ‘ডালের রানী’ বলে বর্ণনা করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুগ ডালকে সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত করা হয়। মুগ ডাল দুই প্রকার- সবুজ মুগ ডাল এবং হলুদ মুগ ডাল।

বাঙালি বাড়িতে মুগের ডাল নানা রকমভাবে রান্না করা হয়। মুগ ডাল একটি হালকা ও নিদোষ আহার। মুগের ডাল, ভাজা মুগের ডাল, মুগের ডালের খিচুড়ি, লাউ-মুগ বা লাউ দিয়ে মুগের ডাল, মুগের ডালের পাঁপড় সব কিছুর সঙ্গেই বাঙালিরা পরিচিত।

মুগ ডাল শিম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি খাদ্যশস্য। মুগ ডালের বৈজ্ঞানিক নাম ভিগনা রেডিয়েটা। মুগ মূলত বর্ষজীবী গুল্ম যা বছরের পুরো সময় জুড়েই হলুদ ফুল এবং হালকা বাদামি রঙের বীজ ফলায়।

মুগের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, যার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, চীন, এবং কোরিয়ায় মুগের ব্যাপক চাষ করা হয়। মুগ এছাড়াও পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াযর কিছু অংশে ফলানো হয়ে থাকে। মুগ একইসাথে মসলাদার এবং মিষ্টি খাবারের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

মুগ ডাল খাওয়া স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয় কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড, জৈব অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেট এবং লিপিডের মতো পুষ্টি রয়েছে। এছাড়াও মুগ ডালে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিডায়াবেটিক, অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ এবং অ্যান্টিটিউমারের বৈশিষ্ট্য, যা অনেক রোগ নিরাময়ে সহায়ক বলে প্রমাণিত।

মুগ ডালে যে সমস্ত রাসায়নিক উপাদান রয়েছে তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ভিটামিন (বি১, বি৫, বি৬ ও বি৯), শর্করা, চর্বি , খনিজ পদার্থ, প্রোটিনের, আঁশ, আমিষ, লৌহ, ক্যারোটিন, আয়রন, ফাইবার, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, মিনারেলস, থিয়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদি।

মুগ ডালকে আয়ুর্বেদে মুংদা বলা হয় যার অর্থ- আনন্দ ও সুখের বহর। আর এই কারণেই আয়ুর্বেদে নিয়মিত এই ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ডালটি যেমন সহজে হজম হয়, তেমনি এর প্রভাব ঠান্ডা হয়, যার কারণে গ্যাসও তৈরি হয় না। সবচেয়ে ভালো দিক হল এটি মস্তিষ্কে সাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে।

প্রতিদিন ডায়েটে মুগ ডাল রাখলে কতটা উপকার পাবেন জেনে নিন-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরা মুগ ডাল খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আসলে, এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে কাজ করে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের দেহে যাতে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক থাকে তাই মুগ ডাল খেতে বলা হয়। মুগডালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। আর তা সহজেই ইনসুলিনকে বার্ন করতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।

ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করে

ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের বেশি করে মুগ ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এতে ভিটামিন বি১৭ নামে এমন একটি উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সারের কোষগুলো কার্যকরভাবে ধ্বংস করে। মুগ ডালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় তা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

ওজন কমায় মুগ ডাল

মুগ ডাল শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে কাজ করে। মুগ ডাল ফাইবার এবং প্রোটিনের একটি ভালো উৎস, তাইএটি সেবন করলে খিদের হরমোনকে প্রভাবিত করে, যা খিদে নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মুগডাল সাইটোকাইনিন হরমোন ক্ষরণ করে, যার ফলে মেটাবলিজম বাড়ে। হজমও ভালো হয়। আর হজম ভালো হলে শরীর সুস্থ থাকবেই।

হজম ক্ষমতা বাড়ে

হজম ক্ষমতা ভালো হলে অর্ধেক রোগ সেরে যায়। আর মুগডাল খেলে হজম ভালো হয়। শরীরের পরিপাক নালীর মধ্যে যে বিষাক্ত পদার্থ আছে তা বের করে দেয় এই মুগ ডাল। ফলে হজম শক্তি বাড়ে। যকৃতের কাজের চাপ কমিয়ে আনতেও সাহায্য করে খাবারটি। এছাড়া এতে লেসিথিন নামে এমন এক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা যকৃতে চর্বি জমাতে বাধা দেয়।

রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে

মুগডালের মধ্যে আয়রন থাকে, যা লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করে। এর ফলে অ্যানিমিয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে। প্রতি কোশে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। এমনকী ভালো করে অক্সিজেনও পৌঁছয় সর্বত্র।

কোলেস্টেরল মাত্রা কমায়

মুগ ডাল রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ধমনীকে পরিষ্কার রাখায় হৃদরোগ ও স্ট্রকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে খাবারটি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দিনে পাঁচ কিংবা তার বেশি বার এই ডাল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি শতকরা ২২ ভাগ কমে আসে। মুগ ডালের কোলেস্টেরল কমানোর প্রভাবের কারণে, মুগ ডাল রক্তে বাড়তে থাকা এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কাজ করে।

হার্ট ভালো রাখে

মুগডালের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম ও আয়রন। যার ফলে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে। আর এর ফলে হার্টের মধ্যে দিয়ে রক্তপ্রবাহ ভালো হয়। পেশি কর্মক্ষম থাকে। সেই সঙ্গে যাঁদের হার্টবিট বেশি থাকে তা স্বাভাবিক ছন্দে আসে। আর চিকিৎসকদের মতে যাঁদের হাইপার টেনশন রয়েছে তাঁদের প্রতিদিন মুগডাল খাওয়ার কথা বলছেন।

শক্তির জোগান দেয়

মুগ ডালে কার্বোহাইড্রেড থাকায় তা শরীরে শক্তির জোগান দেয়। এই উপাদানটি শুধু রক্ত চলাচলকেই সক্রিয় রাখে না, একইসঙ্গে গ্লুকোজের মাত্রাকেও ঠিক রাখে।

বাতের ব্যথা কমায়

শরীরে প্রদাহের সমস্যা থাকলে মুগ ডাল সেবনে উপকার পাওয়া যায়। মুগের ডালে পাওয়া পলিফেনল, যেমন ভিটেক্সিন, গ্যালিক অ্যাসিড এবং আইসোভিটেক্সিন, প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহ এবং ব্যথার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বাতের রোগীদের জন্য মুগ ডাল খাওয়া ভালো প্রমাণিত হতে পারে।

সৌন্দর্য চর্চায় মুগ ডাল

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুগ পাউডার ও ফেসপ্যাক লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়। এর পাশাপাশি এই মসুর ডাল ব্রণ, একজিমা এবং চুলকানি থেকে মুক্তি দিতেও কাজ করে। বিশেষ করে রোদে পোড়া ত্বকে পুরনো রঙ ফিরিয়ে আনতে মুগডালের পেস্ট ব্যবহার করুন। চুলের যত্নেও মুগডাল ব্যবহার করা যায়। ফেস প্যাক শুকনো খসখসে ত্বক যাদের, তাদের জন্য মুগ ডাল বাটা অত্যন্ত উপকারী। একমুঠো মুগডাল কাঁচা দুধে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে ভালো করে বেটে নিন। এরপর মুখ পরিষ্কার করে নিয়ে সারা মুখে ওই পেস্ট লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে আপনার ত্বকের জেল্লায় আপনারই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।

যেভাবে মুগ ডাল খাবেন

রান্নার আগে মুগ ভিজিয়ে রাখতে ভুলবেন না। ভিজিয়ে রাখলে সেগুলো থেকে ফাইটিক অ্যাসিড বের হয়ে যায় যা আমাদের জন্য পুষ্টিকে হজম করা এবং শোষণ করা সহজ করে তোলে।

মুগের ডালের বেসনের লাড়ু

মুগের ডাল একটু ভেজে নিয়ে পিষে বেসন তৈরি করুন। বেসনের সম পরিমাণ ঘি কড়াইয়ে ঢালুন। কম আঁচে বসিয়ে রাখুন। বেসন মিশিয়ে লালচে না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। মাঝে মাঝে একটু দুধ ছিটিয়ে দিন। এই ভাবে দুধ ছিটিয়ে ভেঙ্গে বেসন যখন দানা দানার মতো হয়ে যাবে তখন নামিয়ে নিন। এতে পেষা চিনি, কুচোনো বাদাম, পেস্তা, এলাচের ও লবঙ্গর গুড়ো, গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে লাড়ু তৈরি করে নিন। এই রকমভাবে তৈরি করা মুগের লাড়ু শীতল, বীর্যবর্ধক বাত ও পিত্তের প্রকোপ কমিয়ে দেয়। মুগ ডালের এই পুষ্টিকর লাড্ডু খেলে অনেক রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন