অনেকেই দাঁড়াতে গিয়ে বা হাঁটুর ভর রাখার সময় বুঝতে পারেন হাঁটু পুরোপুরি সোজা করা যাচ্ছে না, বা মনে হয় হাঁটু আটকে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘লকড নি’, অর্থাৎ হাঁটু যেন তালা মেরে বসে গেছে। বয়স্কদের পাশাপাশি বর্তমানে কমবয়সীদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় বসে থাকেন বা শরীরচর্চা করেন না, তারা এ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বেশি।
চিকিৎসকদের মতে, হাঁটুর এই সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এটিকে অবহেলা করলে ভবিষ্যতে হাঁটুর বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এর সম্ভাব্য কারণগুলো জেনে নিন—
মেনিস্কাস ছিঁড়ে যাওয়া
হাঁটুর মধ্যে থাকা কার্টিলেজ বা মেনিস্কাস হঠাৎ মোচড় খেলে ছিঁড়ে যেতে পারে। এতে কার্টিলেজের একটি অংশ হাড়ের মাঝে আটকে যায়, ফলে হাঁটু সোজা করা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় ‘বাকেট হ্যান্ডেল টিয়ার’। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেনিস্কাস ছিঁড়ে গেলে প্রথমে আপনি হাঁটুতে ঝাঁকুনি অনুভব করতে পারেন এবং তারপর প্রচণ্ড ব্যথা শুরু করে। বিশেষ করে হাঁটুতে চাপ দিলে ব্যথা হতে পারে, সঙ্গে হাঁটু ফুলে যায় এবং হাঁটার চেষ্টা করলে হাঁটু বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতিও অনুভব করতে পারেন।
হাঁটু সরে যাওয়া
যখন হাঁটুর হাড় উরুর হাড়ের অর্থাৎ ট্রোক্লিয়ার খাঁজ থেকে সরে যায়, তখন হাঁটুর স্থানচ্যুতি ঘটে।
চিকিৎসকদের মতে, হাঁটুর স্থানচ্যুতি খুবই সাধারণ, বিশেষ করে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যারা নিয়মিত ব্যায়াম এবং খেলাধুলা করেন, তাদের এমনটা হতেই পারে। হাঁটু অতিরিক্ত বাঁকালে আঘাতের ফলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাঁটুর হাড় ভেঙে যাওয়া
হাঁটুর হাড়ে যদি ফাটল দেখা দেয় বা ভেঙে যায়, তবে হাঁটু সোজা করতে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। হাড় সঠিকভাবে না বসলে হাঁটুর চলাফেরাও সীমিত হয়ে যায়। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না করালে সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
আর্থ্রাইটিস
অনেক ধরনের আর্থ্রাইটিসের কারণে হাঁটু বাঁকাতে অসুবিধা হয়। জয়েন্টের মধ্যে তরুণাস্থি এবং অন্যান্য টিস্যু ভেঙে গেলে বা গঠন পরিবর্তন হলে সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়। এটি বয়সের বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে, তবে এর অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। যেমন অতিরিক্ত ওজন বা আগে কখনো হাঁটুতে আঘাত লাগা। যাদের অস্টিওআর্থ্রাইটিস আছে, তাদের হাঁটুতে অস্টিওফাইট নামক একটি হাড়ের বৃদ্ধিও হতে পারে, যার ফলে হাঁটু বাঁকাতে সমস্যা হয়।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে ব্যথা এবং প্রদাহ হয়, যা হাঁটুর নাড়ানোয় ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। বুড়ো আঙুলে প্রভাব ফেলে গাউট। এক্ষেত্রে হাঁটু সহ যেকোনো জয়েন্টে লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং এটি শরীরে ইউরিক এসিড জমা হওয়ার কারণেও হয়। এ ছাড়া এর পেছনে অপুষ্টিকরডায়েট ও দুর্বল মেটাবলিসমও থাকতে পারে।
আর্থ্রোফাইব্রোসিস
জয়েন্টের চারপাশে ‘স্কার’ টিস্যু জমা হলে আর্থ্রোফাইব্রোসিস হতে পারে। যা থেকে ব্যথা এবং হাঁটুর গতির পরিসর সীমিত করে। প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম নিলে, বরফ দিলে এবং ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যায়াম করলেও স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।