নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমের প্রচলিত ধারণা শুধুই একটি প্রচলিত মিথ। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, একজন মানুষের জন্য কতটা ঘুম দরকার তা মূলত নির্ভর করে সে কোথায় থাকে ও তার সাংস্কৃতিক পরিবেশ কেমন।
গবেষণাটিতে ২০টি দেশের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ঘুম সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকরা দেখেছেন, ঘুমের গড় সময় একেক দেশে একেক রকম।
উদাহরণস্বরূপ, কানাডায় একজন মানুষ গড়ে ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট ঘুমান, ফ্রান্সে এই সংখ্যা ৭ ঘণ্টা ৫২ মিনিট এবং জাপানে মাত্র ৬ ঘণ্টা ১৮ মিনিট। অথচ এই পার্থক্যের পরেও কোনো নির্দিষ্ট দেশের জনগণ যে বেশি বা কম সুস্থ, তার পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গবেষণা দলের প্রধান, ইউবিসির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. স্টিভেন হাইন জানান, ঘুমের আদর্শ সময় আসলে সংস্কৃতিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং মানুষের জীবনের অন্যান্য দিকের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো জরুরি। এই ধারণা যে, প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুম না হলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে, সেটি আসলে বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ভরযোগ্য নয়।
আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যা ব্যক্তিকে বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে। একইসঙ্গে ঘুমের অভাবে মনোযোগের ঘাটতি, স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি এবং মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয়।
ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এড়ানো, নির্দিষ্ট সময় মেনে ঘুমানো এবং ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে সহায়ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ব্যক্তি যদি ঘুমের সমস্যা অনুভব করেন বা ক্লান্ত বোধ করেন, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই গবেষণার ফলাফল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাস্থ্যসচেতনতার নামে আরোপিত ‘এক মাপ সবার জন্য’ ধরনের নিয়ম সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে। ঘুমও তার ব্যতিক্রম নয়।
বরং ব্যক্তি বিশেষের জীবনযাত্রা ও পরিবেশ অনুযায়ী ঘুমের সময় নির্ধারণ করাই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পন্থা।