শীতের সময়ে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমতে শুরু করে। ঠাণ্ডা বাতাস ত্বকের ওপরিভাগ থেকে প্রাকৃতিক তেল টেনে নেয়, যার ফলে ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক, টানটান, চুলকানিযুক্ত ও নিস্তেজ। আমাদের মধ্যে অনেকেই বাজারের দামি বডি লোশন ব্যবহার করেন, তবুও কাঙ্ক্ষিত ফল পান না। এবার তারা ভরসা রাখতে পারেন ঘরে তৈরি লোশনে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত—
বেশির ভাগ লোশনেই থাকে অ্যালকোহল, কেমিক্যাল বা কৃত্রিম সুগন্ধি, যা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ভালো নয়। এই কারণেই ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক বডি লোশন এখন বহু মানুষের প্রথম পছন্দ। এটি সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত, ত্বককে গভীরভাবে হাইড্রেট করে এবং শীতের কঠিন শুষ্কতা দূর করে সহজেই। এই লোশনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এতে ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদানই ত্বকের জন্য ভীষণ কাজের। অ্যালোভেরা জেল ত্বককে তাৎক্ষণিক ঠাণ্ডা ও আর্দ্র করে। পাশাপাশি রুক্ষতা দূর করে ত্বককে মসৃণ করে। নারকেল তেল শীতকালে দ্রুত শুষ্ক হয়ে যাওয়া ত্বকে গভীর পুষ্টি জোগায়। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং শীতের খসখসে ভাব কমায়। গ্লিসারিন ত্বকে একটি প্রাকৃতিক আর্দ্র স্তর তৈরি করে, যা দীর্ঘক্ষণ ত্বককে নরম রাখে। ভিটামিন ই তেলের উপাদান ত্বকের বয়সের ছাপ কমায় এবং ত্বকে ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা আনে। গোলাপ জল ত্বককে সতেজ করে ও লোশনের গঠনকে হালকা ও নন-স্টিকি করে তোলে। ফলে এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য খুবই উপযোগী।
ঘরে তৈরি বডি লোশন বানানো অত্যন্ত সহজ। একটি পরিষ্কার পাত্রে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে তাতে নারকেল তেল মিশিয়ে মসৃণ করে নিলেই বেস তৈরি হয়ে যায়। এরপর ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে তাতে থাকা তেল যোগ করলে লোশনে স্কিন রিপেয়ারিং গুণ যুক্ত হয়। এর পরে গ্লিসারিন মেশালে ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
সবশেষে গোলাপ জল যোগ করলে মিশ্রণটি মোলায়েম, হালকা এবং ত্বকে সহজে শুষে নেওয়ার উপযোগী হয়। কেউ চাইলে নিজের পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা যোগ করতে পারেন। এতে লোশনে ন্যাচারাল সুগন্ধ যুক্ত হবে এবং ত্বকে হালকা রিলাক্সিং প্রভাব পড়বে। এই লোশনটি গোসলের পর ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা দ্রুত বজায় থাকে। ভেজা ত্বকে লোশন লাগালে এর ময়েশ্চারাইজিং উপাদানগুলো সহজে শোষিত হয় এবং ত্বক আরো নরম হয়ে ওঠে। রাতে ঘুমানোর আগে লাগালে পরদিন সকালে ত্বক বিশেষভাবে নরম, উজ্জ্বল ও পুষ্ট দেখায়। শীতকালে হাতে, পায়ে, কনুইয়ে, হাঁটুতে বা যেখানেই ত্বক বেশি রুক্ষ হয়, সেখানে প্রতিদিন ব্যবহার করলে দ্রুত পরিবর্তন বোঝা যায়। এমনকি সংবেদনশীল ত্বকেও এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। কারণ এতে কোনো কেমিক্যাল নেই।
এই লোশনটি সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ভালো থাকে। নারকেল তেল ঠাণ্ডায় ঘন হয়ে গেলে ব্যবহারের আগে হালকা গরম পানির কাছে রেখে দিলে আবার নরম হয়ে যায়। কোনো কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ না থাকায় এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, তাই ত্বকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। শীতের কঠিন শুষ্কতা রোধ করার জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট ময়েশ্চারাইজিং সমাধান। যারা রাসায়নিকমুক্ত স্কিনকেয়ার বেছে নিতে চান এবং শীতকালেও নরম, উজ্জ্বল ও সুস্থ ত্বক চান, তাদের জন্য ঘরে তৈরি এই বডি লোশন নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
