ঘুম মানুষের সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেকেই আছেন, যারা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন, যাকে বলা হয় স্লিপ টেরর বা নাইট টেরর। এটি নিছক একটি অভ্যাস নয়, বরং গভীর মানসিক বা স্নায়বিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
ঘুম মূলত দুই ধরনের হয়— নন র্যাপিড আই মুভমেন্ট ও র্যাপিড আই মুভমেন্ট।
স্লিপ টেরর সাধারণত ঘটে নন র্যাপিড আই মুভমেন্টের গভীর স্তরে, যেখানে মস্তিষ্ক কিছুটা বিশ্রামে থাকলেও শরীর উত্তেজিত অবস্থায় থাকে।
চিৎকারের কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের মধ্যে চিৎকার করার পেছনে রয়েছে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা ট্রমা,
ঘুমের ঘাটতি বা নিদ্রাহীনতা,
জ্বর বা অসুস্থতা (বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে),
অ্যালকোহল বা ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,
স্লিপ অ্যাপনিয়া বা শ্বাসজনিত ঘুমের ব্যাধি,
অনেক সময় এই প্রবণতা পারিবারিক ভাবেও দেখা দিতে পারে—অর্থাৎ পরিবারের অন্য সদস্যের মধ্যেও থাকতে পারে একই অভ্যাস।
লক্ষণ ও প্রভাব
ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে ওঠা ব্যক্তি সাধারণত সেসময় জেগে থাকেন না। কখনও কখনও চোখ খোলা থাকলেও তিনি বুঝতে পারেন না কোথায় আছেন বা কী করছেন।
ঘন ঘন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে শরীর ও মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে:
ঘুমের গুণগত মান নষ্ট হয়,
দিনের বেলা ক্লান্তি ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ে,
দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, অ্যালঝাইমারস বা ডিমেনসিয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে,
উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে,
পরিবারের অন্য সদস্যদের ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটে, ফলে মানসিক চাপ বাড়ে।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সাধারণ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি:
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন,
ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টিভি স্ক্রিন এড়িয়ে চলু্ন,
অ্যালকোহল ও ঘুমের ওষুধ না খাওয়াই ভালো,
মানসিক সমস্যা থাকলে মনোবিদ বা সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের মধ্যে চিৎকার করা কখনও কখনও কোনো গভীর সমস্যা বা অসুস্থতার উপসর্গ হতে পারে। তাই একে অবহেলা না করে প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।