English

28.8 C
Dhaka
বুধবার, আগস্ট ১৩, ২০২৫
- Advertisement -

তোতলাদের নিয়ে মোটেও ঠাট্টা করবেন না

- Advertisements -
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু: তোতলামো অনেক পুরনো সমস্যা। এর ইতিহাস অনেক আগের। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের নাম আমরা প্রায় সবাই জানি। স্কুলের বন্ধুরা তাকে উত্যক্ত করত তোতলামোর কারণে। এরিস্টটলও কিন্তু তোতলা ছিলেন।
শুধু এরাই নন, বিশ্বব্যাপী যত মানুষ বাস করেন, তার প্রায় ১০ শতাংশের তোতলামো সমস্যা রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়। কিন্তু মানুষ কেন তোতলামো করে, এর কারণ এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা গবেণষা করে বের করতে পারেননি। তবে কিছু কিছু বিষয় এজন্য দায়ী বলে মনে করা হয়ে থাকে।
এর মধ্যে বংশগত কারণ একটি। বাবা-মা, ভাইবোন, মামা, চাচা এমন কারও তোতলামোর সমস্যা থাকলে বংশগতভাবে পরবর্তী প্রজন্মের এ সমস্যায় ভোগার পরিমাণ গবেষকরা বলে থাকেন কমপক্ষে তিন গুণ বেশি। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বংশগতির ধারক জিনের মিউটেশন বা রূপান্তরের কারণেও মানুষের মধ্যে তোতলামি ব্যাপারটা দেখতে পাওয়া যায়।
অনেক দিন ধরেই মস্তিষ্কের এই ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু মস্তিষ্কের কোনো কারণে এ সমস্যা হয় কিনা, তা জানাতে পারেননি তারা। তবে এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মস্তিষ্কের যে অংশ কথা বলার জন্য কাজ করে থাকে, তোতলা ব্যক্তিদের সে অংশটি কম কাজ করে। মানসিক চাপ, ভয়-ভীতি তোতলামোর জন্য সরাসরি দায়ী না হলেও সমস্যাটি বেশ বাড়িয়ে দেয়।

তোতলামির এ সমস্যা শিশু বয়সে বেশি দেখা দেয়। তবে সমস্যাটি একটা বয়সে এসে আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। প্রায় ৮০ শতাংশ তোতলা শিশু ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থতা লাভ করে। বাকি ২০ শতাংশ আজীবন তোতলাতে পারে। এদের মধ্যে আবার কারও সমস্যা খুব বেশি থাকে, কেউ আবার অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে। এদের তোতলামি সহজেই ধরা পড়ে না।

তোতলামি হলে সবচেয়ে যে সমস্যা হয় তা হলো- কারও সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়। এদের কথা বলতে বেশি সময় লাগে। মনের ভাব প্রকাশ করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। অনেকে এতে বিরক্ত হন। ফলে তোতলানো ব্যক্তি দমে যান, বিষণ্নতায় ভোগেন। সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। কর্মক্ষেত্রে এরা বেশি সুবিধা করতে পারেন না বলে হতাশ হয়েও পড়েন।

মা-বাবা তোতলা শিশুকে নিয়ে খুব হতাশ হয়ে যান। সমাজের অন্যদের থেকে দূরে রাখেন। এতে সমস্যা আরও বাড়ে। এমনটা করবেন না। শিশুকে অন্যদের সঙ্গে মিশতে দিন। কেউ উত্যক্ত করলে ব্যবস্থা নিন। শিশুকে সাহস দিন। তার মনবোল চাঙা করুন। দেখবেন, সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলে তার এই সমস্যা কমে যাবে।

তোতলামি দূর করার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কিছু ব্যায়াম বেশ ভালো কাজে দেয়। স্পিচ থেরাপি ভালো কাজ করে। এভাবে তোতলামি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে।

অনেকে মনে করেন, তোতলামি পাপের ফসল। এটা বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা। অনেকে শিশুর চিকিৎসার জন্য মুখের মধ্যে পয়সা রাখেন। এটা কুসংস্কার। কোনো গবেষণায় এর কার্যকর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উল্টো শিশু পয়সা গিলে ফেললে শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। তাই সাবধান।

লেখক: স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক, ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, আগারগাঁও, ঢাকা

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/67fc
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন