গরমে ঘেমে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর শরীর ও মনকে শান্ত করতে গোসল করাটা বেশ আরামের অনুভূতি। ঘুমানোর আগে গোসল করলে ঘুমটাও ভালো হয়। তবে এই আরামটি পেতে গিলে ঘন ও লম্বা চুলের অধিকারীরা না জেনেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনেন অনেক সময়।
মাথা ঠান্ডা করতে গোসল করার পর হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস দিয়ে চুল শুকাতে ভালো লাগেনা, আবর সময় নিয়ে বসে বসে চুল শুকানোটাও ঝামেলার লাগে। তাই অনেকেই ভেজা মাথাতেই শুয়ে পড়েন রাতে।
ছোটবেলায় গুরুজনে বলতো, এতে ঠান্ডা লেগে যাবে, মাথায় ঠান্ডা বসে যাবে ইত্যাদি। তবে অনেকেই বড় হয়ে দেখেছেন যে, ঠান্ডা তো লাগছেনা। তাহলে নিশ্চয় কোনো ক্ষতি নেই। তা ঠিক নয়। সর্দি-কাশি না লাগলেও অন্যান্য ক্ষতি আছে এই অভ্যাসের। জেনে নিন কেন ভেজা চুলে ঘুমাবেন না-
১. চুলে ভাঙন ধরা
ভেজা চুল নিয়ে শুয়ে পড়লে চুলে ভাঙন ধরতে শুরু করে। তার বড় কারণ, চুলের তন্তুগুলো ভেজা অবস্থায় বেশি ভঙ্গুর হয়ে যায়। ঘুমোনোর সময়ে ভেজা চুল এবং বিছানার চাদরের মধ্যে যে ঘর্ষণ তৈরি হয়, তাতে চুল ছিঁড়ে যেতে পারে। স্ট্রেট বা ঢেউখেলানো চুলে ভেজা অবস্থায় ভাঙন বেশি ধরে। বরং কোঁকড়ানো চুলে এই প্রবণতা কিছুটা কম।
২. মাইক্রোবায়োমে ব্যাঘাত
চুলের সুস্থ বৃদ্ধি এবং চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য একটি সুষম মাইক্রোবায়োম অপরিহার্য। মাইক্রোবায়োম হলো আপনার পরিপাকতন্ত্রে বসবাসকারী বিভিন্ন ধরণের অণুজীব। এটি বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন হজম, পুষ্টি শোষণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ এবং এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য।
যখন আপনি চুল ভেজা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েন, আপনার মাথায় ঘামের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি শ্যাম্পুর মতো পণ্যের অবশিষ্টাংশ এবং ইস্টের সঙ্গে মিলে মাইক্রোবায়োমকে ব্যাহত করতে পারে। ফলে চুলের ফলিকলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে।
৩. ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি
ভেজা চুলে ঘুমোলে মাথার ত্বকে এবং চুলের গোড়ায় ব্যাক্টেরিয়া দানা বাঁধতে পারে। ভেজা বালিশ বা বিছানায় ছত্রাক তৈরি হতে পারে। এসব ছত্রাক থেকে মাথার ত্বক এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৪. মাথায় ব্রণের সমস্যা
মাথার ত্বকের সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হল ব্রণ। চুল ভেজা রাখলে অতিরিক্ত আর্দ্র হয়ে যায় মাথার ত্বক। এতে ব্যাক্টেরিয়া বাড়তে থাকে, যা মাথার ত্বকে ব্রণ সৃষ্টি করে, চুলকানি বা ঘা-ও হতে পারে। এমনকি সেই ব্রণ মাথার ত্বকের সংক্রমণে পরিণত হতে পারে।
৫. খুশকির সমস্যা
মাথার ত্বকে যদি খুশকি, ডার্মাটাইটিসের প্রবণতা থাকে, সে ক্ষেত্রে ভেজা চুলে শুয়ে পড়লে মাথার ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ব্যাক্টেরিয়া এবং ইস্টের বংশবিস্তার চলতে থাকে। এর ফলে ফলিকুলাইটিস বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিস রোগে চুলের স্বাস্থ্যের অবনতিও হতে পারে।
এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে ঘুমাতে যাওয়ার ঘণ্টাখানের আগে গোসল সেরে নিন। অথবা, বাতাসের নিচে বসে নরম কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে মুছে চুল শুকিয়ে নিন।