আমরা সবাই জানি কলা একটি পুষ্টিকর ফল। তবে বাজারে কলার নানা রকমের ধরন দেখা যায়, যার মধ্যে দুটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়—হলুদ কলা এবং লাল কলা। হলুদ কলা আমরা প্রতিদিন খেয়ে থাকি, কিন্তু লাল কলা অনেকের কাছেই এখনও নতুন। তাহলে প্রশ্ন হল— এই দুটি কলার মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী?
লাল কলা, যাকে মুসা আকুমিনাটা, রেড কেলা, বা কিউবান কলা নামেও ডাকা হয়, দেখতে যেমন লালচে রঙের, তেমনই স্বাদে হালকা রাস্পবেরির মত মিষ্টি। পুষ্টিবিদ একতা ট্যান্ডন বলেন, ‘লাল কলা জিনগতভাবে পরিবর্তিত নয় বরং একটি পুষ্টিগুণে ভরা কলার জাত।’ এতে রয়েছে ভিটামিন C ও B6, বিটা ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম। এই পুষ্টিগুলো একত্রে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
লাল কলার উপকারিতা
শক্তি যোগায়: প্রাকৃতিক শর্করা ও কার্বোহাইড্রেট থাকায় এটি তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়।
হৃদযন্ত্রের যত্ন: উচ্চ পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরল কমায়।
হজমে সহায়ক: ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভিটামিন C ও B6 সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারী: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ওজন কমাতে সহায়ক: ফাইবার বেশি, ক্যালোরি কম। ক্ষুধা কমায় ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি রাখে।
মেজাজ উন্নত করে: ভিটামিন B6 সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মুড ভালো রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।
লাল ও হলুদ কলার পার্থক্য
পুষ্টিবিদ বলেন, হলুদ কলার তুলনায় লাল কলা ছোট ও ঘন। এতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি, বি৬, ম্যাগনেশিয়াম ও বিটা-ক্যারোটিন থাকে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ভালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ১–২টি লাল কলা রাখা যেতে পারে। তবে খাবারের মাঝে খাওয়াই উত্তম, যাতে শরীর ভালোভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে।আপনার যদি কলার প্রতি অ্যালার্জি না থাকে এবং অতিরিক্ত না খান, তবে লাল কলা সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যকর। লাল ও হলুদ—উভয় কলাই উপকারী। তবে পুষ্টিগুণ বিবেচনায় লাল কলাকে একটু এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা।
কখন খাবেন লাল কলা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারের মাঝে বা স্ন্যাকস হিসেবে লাল কলা খাওয়া উচিত—সাথে সাথেই প্রধান খাবারের পর। এতে এর পুষ্টিগুণ আরও কার্যকরভাবে শরীরে শোষিত হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
আপনার যদি ওজন নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বৃদ্ধি, হজমের উন্নতি বা হৃদযন্ত্রের সুস্থতা নিয়ে চিন্তা থাকে, তাহলে লাল কলা হতে পারে আপনার ডেইলি ডায়েটের পারফেক্ট সংযোজন। তবে অবশ্যই সব কিছুর মত পরিমিত মাত্রায় খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিদিন ১-২টি লাল কলা খাওয়া পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যকর।