English

28.1 C
Dhaka
বুধবার, আগস্ট ২৭, ২০২৫
- Advertisement -

কিশোরগন্জের কটিয়াদীতে ভাই-বোনের শিকলবন্দি জীবন: চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও

- Advertisements -

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন মানসিক প্রতিবন্ধী আপন ভাই-বোন। অর্থাভাবে এতদিন হয়নি তাদের চিকিৎসা।

আছমা খাতুন (২৮) ১২ বছর আর ও তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর (২৫) ১০ বছর ধরে হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ১৫ বছর বয়সে গার্মেন্টসে কাজ করে নিজের জমানো টাকা খোয়া যাওয়ায় আছমা খাতুন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। আর লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসা করা জাহাঙ্গীর প্রেমঘটিত কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর থেকেই তাদের জীবন বাঁধা পড়ে শিকলে।

আছমা ও জাহাঙ্গীর কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর ফজলু মিয়ার সন্তান। বৃদ্ধ বাবা দিনমজুরি করে কোনোরকমে সংসার চালালেও মা বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। অতি দারিদ্র্যের কারণে দুই ভাই-বোনের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেননি তারা। ফলে সন্তানরা যাতে করে হারিয়ে না যায় বা কারও যেন কোনো ক্ষতি না করে ফেলে— এই ভয়ে তাদের সর্বাবস্থায় শিকলে বন্দি করে রাখা হয়।

এদিকে শিকলে বন্দি ভাই-বোনের মানবেতর জীবনযাপনের কথা সংবাদকর্মীদের কাছে জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলাম নিজ চোখে দেখতে রোববার বিকালে ছুটে যান তাদের বাড়িতে। সোমবার দুপুরে অসুস্থ দুই ভাই-বোনকে চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ভাঙাচোরা ঘরের এক কোণে আছমার পা লোহার শিকলে বাঁধা থাকে। খানিকটা দূরে আরেক কোণে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা জাহাঙ্গীর। শীত-গ্রীষ্ম, দিন-রাত একইভাবে ঘরের খুঁটি ও গাছের সঙ্গে শিকলবন্দি থাকতে হয় তাদের। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, খেয়ে-না খেয়ে বছরের পর বছর এভাবেই কাটছে তাদের জীবন।

তাদের বোন সালমা আক্তার জানান, মাত্র ১৫ বছর বয়সে আছমা গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন। ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা জমা রেখে ছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে। টাকা জমা রাখা ওই ব্যক্তি আছমার জমাকৃত টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন আছমা। তখন থেকেই শিকলে বাঁধা পড়ে আছমার জীবন। এর কয়েক বছর পর লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসা করা ভাই জাহাঙ্গীর প্রেমঘটিত কারণে মানসিক ভারসাম্য হারালে তাকেও শিকলে বেঁধে রাখা হয়।

সালমা আরও বলেন, আমরা চার বোন ও এক ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। আমাদের কোনো জমিজমা নেই। একটি ছোট্ট ঘরে কোনো আসবাবপত্র নেই। তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারি না। মানুষে দিলে খায়, না দিলে উপোষ থাকি। এরই মধ্যে দুই ভাই-বোন মানসিক রোগী হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলাম জানান, ১২ বছর ধরে শিকলে বন্দি ভাই-বোনের বিষয়টি সংবাদকর্মীদের কাছে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের দেখতে যাই। মানসিক ভারসাম্যহীন দুই ভাই-বোনের দায়িত্ব নিয়ে তাদের চিকিৎসার জন্য আজ সোমবার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তাদের চিকিৎসা করানোর জন্য সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/4ywl
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন