আলোচিত জুলাই ঘোষণা নিয়ে টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘ প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির কোনো এক তারিখে নির্বাচন হবে বলে জানিয়ে ভাষণ দিয়েছেন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতির চিঠি দিয়েছেন। তাতে অনেকে মনে করছেন, দেশ এখন নির্বাচনমুখী পথে আছে এবং বিরোধীপক্ষ— বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি— সবাই এতে উৎসাহিত। তবে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি বলছে দেশের অবস্থা এখনো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। তাদের দাবি, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির দাবিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
জুলাই ঘোষণা তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। বাকি রাজনৈতিক দলগুলোও বিশেষ করে বামপন্থীরা এই ঘোষণায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করেন।’ সম্প্রতি তার ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কেউ কেউ ইতিমধ্যে এই ঘোষণা সংশোধন করা উচিত বলছেন।
যদিও নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে বলে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের তফসিল সাধারণত নির্বাচনের দুই মাস আগে দেওয়া হয়। ফলে তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা করা হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবার বিএনপির অভ্যন্তরে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে নির্বাচন হচ্ছে, আর ঐ নির্বাচন যদি নিরঙ্কুশ হয়, তবে তারা বিজয়ী দল হবে।
কিন্তু সন্দেহবাতিকগ্রস্তরা যারা আমার মতো— এ প্রশ্ন করছেন যে, এই নির্বাচন কি সত্যিই হবে? বক্তৃতায় দাবি করা হয়েছে, সংস্কার এবং বিচারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু কেউ তা আদৌ দেখেননি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনকে উৎসবস্মারক, ঐতিহাসিক ঘোষণায় রূপ দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তবে বাচ্চা-কাচ্চাদের নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়াটা বিপজ্জনক, কারণ কেউ এদের নিরাপদ রাখতে পারবে না যদি সেখানে সংঘর্ষ হয়।’
জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা কয়েক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এখনো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়।
হঠাৎ করে আমরা শুনলাম আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন যে, পুলিশকে বদলি করা হবে লটারির মাধ্যমে। তার মানে দেশের কোন অঞ্চল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কোন অঞ্চল কম ঝুঁকিপূর্ণ, কোন জায়গায় কোন ধরনের অফিসারকে-কর্মকর্তাকে পাঠানো দরকার সেই বিচার বিবেচনা দরকার নেই।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বা যেটাকে জাতীয় সনদ বলা হচ্ছে এটা কিন্তু এখন চূড়ান্ত নয়। এটা এখন যে প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে অনেক রকমের বিতর্ক আছে। শেষ পর্যন্ত এতে কে স্বাক্ষর করবে কে করবে না সেটা নিয়েও জটিলতা আছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, অন্যরা নিল কি না নিল সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না, আমি মনে করি। তার পরও আমরা চাই নিঃসন্দেহে ভালো নির্বাচনের জন্য সবাই অংশগ্রহণ করুক। এ ছাড়া, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতই ভালো বলা হোক না কেন, সেটি ভালো নয়। এক লাখ পুলিশ নিয়োগে একদলীয় বিবেচনায় করা হতে পারে। যা পক্ষপাতমূলক এবং লেনদেন নির্ভর হতে পারে।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘সবকিছুতে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব সরকারের।’ তার মতে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তিনি আনন্দিত হবেন, কারণ তিনি চান গণতন্ত্র সুসংহত হোক।