English

29 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

নোয়াবের সমর্থনে বিএনপির বিবৃতি দেখে সাংবাদিক সমাজ স্তম্ভিত-ক্ষুব্ধ

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

পুরানো প্রবচন “কাকের বাসায় কোকিলের ‘ছা’, জাত বিদ্যা করে রা”। আবার এমন কথারও প্রচলন আছে,“যাহার মনে যা, ফাল দিয়ে উঠে তাহা”। সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের বিবৃতির সমর্থনে গত রোববার রাতে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতি দেখে দেশের সাংবাদিক সমাজের কাছে প্রচলিত এ সব প্রবচনের কথা মনে পড়ছে। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ (ডিইউজে) ফেডারেশনভূক্ত দেশের সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা রীতিমত স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি প্রত্যাখান করেছেন বিএনপি মহাসচিবের বিবৃতিকে।
নোয়াব গত ২১ আগস্ট “সংবাদপত্র শিল্প রক্ষার” দাবিতে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে গণমাধ্যম কর্মীদের দীর্ঘদিনের ‘ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদকে অবান্তর ও অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে বলেছে, সংবাদপত্রে এই ওয়েজবোর্ড কার্যকর করা সম্ভব নয়। তারা আরও বলেছে, শুধু নবম ওয়েজবোর্ডই নয়, কোনও ওয়েজবোর্ডই যৌক্তিক নয়। নোয়াবের এই বিবৃতির প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই বিএফইউজে ও ডিইউজে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ওয়েজবোর্ড শুধুমাত্র একটি বেতন কাঠামো নয়। এটা রাষ্ট্রের আইন। এ আইনে গণমাধ্যম কর্মীদের বেতন-ভাতার অধিকারের পাশাপশি মর্যাদাও সুরক্ষিত হয়েছে। নোয়াবের জন্মের বহু আগে থেকেই সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য ওয়েজবোর্ড কার্যকর রয়েছে। নোয়াবের দাবি অনুযায়ী ওয়েজবোর্ড যদি অবান্তর ও অযৌক্তিক হয়, তা হলে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে অন্য শিল্পের শ্রমিক ও দিনমজুরের কোন পার্থক্য থাকে না। ওয়েজবোর্ড না থাকলে একজন পেশাদার সম্পাদক থেকে শুরু করে সংবাদপত্র শিল্পের পিয়ন পর্যন্ত সবাই এক কথায় মজুরে পরিণত হবেন।
১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের রুটি-রুজি ও মর্যাদা সুরক্ষা করে ‘নিউজ পেপার এমপ্লোয়িজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) এ্যাক্ট’ আইন প্রণয়ন করে দিয়েছিলেন। ওই আইনে সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র কর্মীদের সুযোগ-সুবিধার বিধান রাখা হয়। দলমত নির্বিশেষে দেশের সাংবাদিক সমাজ ওই আইনের আওতায় সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশ ও জাতির সেবায় কাজ করেছেন। কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার জাতির পিতা কর্তৃক প্রণীত আইনটি বাতিল করে সাংবাদিকদের অন্যান্য শিল্প কারখানার শ্রমিকদের কাতারে নামিয়ে দেয়। এরপর থেকে ওই আইনের বিরুদ্ধে এদেশের সাংবাদিক সমাজ লাগাতার আন্দোলন করে আসছে। সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের রুটি-রুজির অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় ২০০৬ সালের আইনকে সময়োপযোগী করে ‘গণমাধ্যম কর্মী আইন’ নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে যা এখন জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিএফইউজে-ডিইউজে গত ২২ আগস্ট দেওয়া বিবৃতিতে বলেছিল, ‘আগস্ট হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি চক্রান্তের মাস। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এ মাসেই চক্রান্তকারিরা বেশি তৎপর হয়। গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপি নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছে নোয়াবের বিবৃতিতে তার গন্ধ পাওয়া যায়’। মাত্র দু’ দিনের মাথায় বিএনপি নোয়াবের দাবির সমর্থনে বিবৃতি দিয়ে প্রমাণ করলো, গণমাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের সাংবাদিক সমাজের স¦ার্থের বিরুদ্ধে নোয়াবের বিবৃতির সমর্থনে বিএনপির বিবৃতির যোগসূত্র কি সরকারকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, নোয়াবের দাবি ও সমর্থনের সারাংশে সরকারকে জিম্মি করে স্বার্থ হাসিলের পাশাপশি সংবাদকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার বিষয় রয়েছে। নবম ওয়েজবোর্ডের বিরুদ্ধে নোয়াবের মামলার শুনানিতে সুপ্রীমকোর্ট বলেছে, “সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্রের মালিকরা অস্তিত্বহীন”। তার মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রের আইন মনে করে, সংবাদপত্রের অন্তপ্রাণ হচ্ছেন সাংবাদিকরা। আর এজন্যই রাষ্ট্র ওয়েজবোর্ড আইন দ্বারা সংবাদকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছে। নোয়াব ও তাদের সমর্থকেরা দীর্ঘদিনের সেই অধিকার ও মর্যাদা চিরতরে বিনষ্ট করে সংবাদকর্মীদের দিনমজুর বানানোর চক্রান্ত শুরু করেছে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতৃত্বে গোটা দেশের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ। নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেন, কোন অশুভ শক্তিকে ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে দেওয়া হবে না।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সিইউজে সভাপতি মোহাম¥দ আলী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম, কেইউজে সভাপতি মুন্সী মাহবুব আলম সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান স¤্রাট, জেইউজে সভাপতি সাজেদ রহমান বকুল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, বিইউজে সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক জিএম রউফ,আরইউজে সভাপতি কাজী শাহেদ, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, এমইউজে সভাপতি আতাউল করীম খোকন, সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম মোস্তফা, সিবিএইউজে সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, এনইউজে সভাপতি আবদুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আমির হোসাইন স্মীত, জেইউকে সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক জামিল হাসান খোকন। এছাড়াও বরিশাল, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, গোপালগঞ্জ, বরগুনা, চাঁদপুর ও খাগড়াছড়িসহ, বিভিন্ন জেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন