English

28.1 C
Dhaka
রবিবার, মে ১৮, ২০২৫
- Advertisement -

সমৃদ্ধ সংস্কৃতির চাদরে আগলে থাকা পুরান ঢাকা হারিয়ে ফেলছে নিজস্বতা: কাদের গনি চৌধুরী

- Advertisements -

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন,পুরান ঢাকা এ জাতির এক অতুলনীয় ঐতিহ্য, অপূরণীয় অধ্যায়।পুরান ঢাকায় আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।পুরান ঢাকার সংস্কৃতি, প্রথা, কৃষ্টি, আনুষ্ঠানিকতা সবকিছুতেই একটা নিজস্বতা আছে। ঢাকাই সংস্কৃতিটা বিকশিত হয়েছে তার নিজস্ব পরিধির মধ্যে এবং তা নিয়ে তারা গর্ব করে। এ গর্ব গোটা জাতির।
এখন আমরা যে ঢাকাকে চিনি, সেটা কিন্তু নকল ঢাকা। আসল ঢাকা পুরান ঢাকা। খাঁটি ঢাকা খাঁটি বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত।

আজ রাতে লালবাগ সাগুন কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর সমিতির(ঢাকা সমিতি) অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
ঢাকা সমিতির সভাপতি ইসমাইল নওয়াবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেবের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন মোহাম্মদ আলী,মহিউদ্দিন আহমেদ,নিজাম উদ্দিন, হাজী আবদুস সালাম, আবদুর রাজ্জাক, আজিম বকস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পুরান ঢাকাকে রাজধানী ঢাকার প্রাণ বললে বেশি বলা হবে না। ঢাকা মহানগরীর আদি অঞ্চল এটি। এর ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের। এ নগরীর অবস্থান রাজধানী ঢাকার একটি ছোট অঞ্চলজুড়ে হলেও সেটি যেন ধরে রেখেছে একরাজ্য পরিমাণ ইতিহাস।

বলছিলাম ঢাকা বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত। কিন্তু আজ সেই বুড়িগঙ্গাও মৃতপ্রায়, ঢাকারও একই দশা। একসময় যে বুড়িগঙ্গার তীরে বসে মানুষ প্রাণ খুলে শ্বাস নিতো,এখন সেখানে দুগন্ধে বমি আসে।
ঢাকা মানে আসল ঢাকা, এখন আমরা যেটা অবহেলা করে পুরান ঢাকা বলি। কিন্তু এই পুরান ঢাকাই কিন্তু আমাদের ঢাকার ঐতিহ্য। চারশ বছরের পুরোনো এই শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস। কিন্তু এই পুরান ঢাকা এখন আর বাসযোগ্য নয়। অনেক মানুষ থাকেন বটে, কিন্তু পুরান ঢাকা সত্যি সত্যি বাসযোগ্য নয়। নিমতলী ও চকবাজারের আগুনের পর এটি আর ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। উন্নত পরিবেশ না থাকায় এখানকার আদিবাসীদের অনেকেই ধানমন্ডী, গুলশান, বনানী- উত্তরায় চলে যাচ্ছেন।

বাসযোগ্যতার প্রথম শর্ত হলো, নিরাপত্তা। সেই নিরাপত্তাই নেই পুরান ঢাকায়। ট্র্যাজেডি হলো, যে ঢাকার যে অংশটি বাসযোগ্যই নয়, সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকার একটি। তার মানে আমরা জেনেশুনে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুকূপে থাকতে দিচ্ছি।

নিমতলী আর চকবাজার আমাদের জাগানোর, শেখানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা জাগিওনি, শিখিওনি। দুটি আগুন তো ওয়ার্নিং দিল, একটা বড় ভূমিকম্পে কী হবে পুরান ঢাকার, ভাবতেও ভয় লাগে। এখন প্রশ্ন হলো, এই পুরান ঢাকা নিয়ে আমরা কী করবো? এ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, তর্ক হচ্ছে; কিন্তু কোনো গ্রহণযোগ্য বাস্তব সমাধান আসেনি।

পুরান ঢাকাকে ব্যাখ্যা করা হয় ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’ বলে। এখানে প্রচুর গলি, বাজার থাকায় এই নামকরণ করেছিলো হয়তো কেউ। শুধু বাজার নয়, এখানে আছে অনেকগুলো ‘পুর’, ‘গঞ্জ’, ‘তলা’, ‘তলী’ এবং বাহারি নামের এলাকা। এলাকার নামকরণের পেছনে লুকিয়ে আছে একটির চেয়ে একটি রোমাঞ্চকর ঘটনা। ৪০০ বছরের ইতিহাসের খনি পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো যেন একেকটা গল্প।

একেকটি রাস্তা তার নিজের পরিচয় দেয় নামে, স্থাপত্যে, প্রকৃতি-পরিবেশে। প্রতেকটি এলাকার নামের সাথে জড়িয়ে আছে অজানা অনেক স্মৃতি। তাদের নিজস্ব কিছু বলার আছে, অস্তিত্ব আছে।

পুরান ঢাকার সংস্কৃতি, প্রথা, কৃষ্টি, আনুষ্ঠানিকতা সবকিছুতেই একটা নিজস্বতা আছে। ঢাকাই সংস্কৃতিটা বিকশিত হয়েছে তার নিজস্ব পরিধির মধ্যে এবং তা নিয়ে তারা গর্ব করে। আমরাও করি।

পুরান ঢাকা এমনই একটি নগরী যা তার ঋদ্ধ ঐতিহ্য ও বহুবিচিত্র সংস্কৃতির ক্ষীয়মান অথচ কালজয়ী ঐশ্বর্য এখনও অন্তিম শ্বাসের বুকচেরা গভীরতায় ধরে রেখেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে নগরের আত্মা হিসেবে আছে এটি।

পুরাণ ঢাকাজুড়ে আছে নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা। রূপলাল হাউস, বাহাদুর শাহ পার্ক ,বলধা গার্ডেন ,লালবাগ কেল্লা,আহসান মঞ্জিল ,বড়কাটরা , ছোট কাটরা,রোজ গার্ডেন,লালকুঠি, জিনজিরা প্রাসাদ,তারা মসজিদ,ঢাকেশ্বরী মন্দির,আর্মেনীয় গির্জা, বিউটি বোর্ডিং নানা রকম স্থাপনা রয়েছে এ অঞ্চলে। কিন্তু এসব স্থাপনা ঘিরে দেখা যায় অযত্ন, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এগুলোর মর্যাদা, হয়ে উঠছে ধ্বংসপ্রায়।

এক সময় অত্যন্ত সুন্দর, পরিকল্পিত এবং ছিমছাম একটি শহর ছিল পুরান ঢাকা। কিন্তু কালক্রমে সেই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে আসছে। অবশ্য এর পেছনে মানুষই দায়ী।
দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই পুরান ঢাকা কেবল অবহেলায় হারিয়ে ফেলছে তার সর্বস্বতা।

দ্রুত নগরায়নের কারণে রাজধানীর পুরান ঢাকা তার ইতিহাস ও জীবন্ত স্থাপত্য হারানোর ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।সমৃদ্ধ সংস্কৃতির চাদরে আগলে থাকা এই পুরান ঢাকা হারিয়ে ফেলছে নিজস্বতা।
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে বুড়িগঙ্গা নদী। এই নদী এখন মরা নদী। এর পানি খুবই কালো। দুগন্ধযুক্ত। এতে কোনো মাছ নেই।যে মাছ আছে তা খাওয়া যায় না।

 

পুরান ঢাকার পুরোনো ঐতিহ্য আবারও ফিরিয়ে আনা উচিত। এর জন্য প্রয়োজন এক পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। নিজেদের ঐতিহ্যগুলো এভাবে হারিয়ে ফেলতে ফেলতে একসময় আমরা হয়ে উঠব সংস্কৃতিবিমুখ। আর এটি আমাদের জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বিখ্যাত দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ ম্যাকস ফুলারকে উদ্বৃত করে তিনি বলেন, এই ম মনিষী বলেছে ‘একমাত্র মূর্খরাই ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে গৌরববোধ করে।’ ইতোমধ্যে আমাদের অনেক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকগুলো আবার ধ্বংস হওয়ার পথে। বহুতল ভবন নির্মাণ করে, নকশা নষ্ট করে, অপরিকল্পিত সংস্কারের নামে ঐতিহ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। ঐতিহ্য সেটি শোষণ, ঘৃণা, কিংবা ভালোবাসার প্রতীক যাই হোক না কেন, তা প্রজন্মের কাছে সময়কে তুলে ধরে।
তাই সবকিছু হারিয়ে যাওয়ার গোড়াতেই টেনে ধরতে হবে লাগাম। আর এর জন্য প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের আন্তরিক মনোযোগ দাবি করি।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন