English

29.2 C
Dhaka
শুক্রবার, জুলাই ৪, ২০২৫
- Advertisement -

বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ছুড়ে ফেলে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে: কাদের গনি চৌধুরী

- Advertisements -

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংস্কৃতি একটি জাতির পরিচিতির মৌলিক উপাদান। এর মাধ্যমে কোনো জাতির জাতিসত্তা আলাদারূপে পরিস্ফুটিত হয়। তাই সংস্কৃতিকে বলা হয়, একটি সমাজের আয়না। কিন্তু সেই আয়নায় যদি সমাজের চিত্র না ফুটে, সমাজের বিপরীত কিছু ফুটে ওঠে, তবে সমাজের অসংগতি দেখা দেবে।

তিনি বলেন, অপসংস্কৃতি মানুষকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্যের বিকাশকে স্তব্ধ করে দিয়ে শ্রীহীনতার দিকে ঠেলে দেয়। কোনো জাতির স্বকীয়তা, জাতীয়তা, সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ তার সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে। তেমনি সংস্কৃতিতে বিজাতীয় আগ্রাসন একটি জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।

তিনি বলেন, জাতির উন্নয়নে শিক্ষা আমদানি করা যায় বটে, কিন্তু সংস্কৃতি আমদানি করলে জাতিসত্তা হারিয়ে যায়।

আজ শুক্রবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন ‘আমরা কুঁড়ি’র ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন।

‘এ এস এম কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, সৈয়দ আলমগীর, আইয়ুব ভূঁইয়া, নুরুল আজম পবন, এরফানুল হক নাহিদ, মাসুদুল হক, রাশেদা ওয়াহিদ মুক্তা, আমরা কুড়ি’র চেয়ারম্যান মুশতাক আহমদ ও মহাসচিব ফেরদৌস আরা বন্যা।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন,বাংলাদেশ এমন একটি দেশ; যাদের সংস্কৃতির আছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। যুগে যুগে এই দেশের সংস্কৃতি হয়েছে সমৃদ্ধ। অথচ গত কয়েক বছর ধরে এই দেশের সংস্কৃতিতে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন চোখে পড়ার মত। এই আগ্রাসন এতোটাই ভয়াবহ হয়ে উঠছে যে, দেশীয় সংস্কৃতিকে ভুলে যাচ্ছে অনেকে। অনেকে বাংলা চলচ্চিতের অভিনেতাদের না জানলেও ভারতীয় অভিনেতা ও চলচ্চিত্রের নাম পরিচয় মুখস্থ। যেসব ছেলেরা রিয়াদ, মান্না, শাকিবদের নাম জানে না। তারা অনায়াসেই বলতে পারবে সালমান, শাহরুখ, আমির খানদের ইতিহাস। যেখানে দেশীয় চলচ্চিত্র নির্মাতারা লোকসান দিয়ে চলচ্চিত্র থেকে দুরে সরে যেতে চাইছে। সেখানে বিদেশীরা এই দেশের হলগুলোতে তাদের চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যাবসা করতে চাইছে। কারন, তারা জানে এই দেশের হলগুলোতে দেশীয় চলচ্চিত্রের দর্শক না থাকলেও, বিদেশী চলচ্চিত্রের দর্শকের অভাব হবে না। এই দেশের ছেলেরা বাংলা গান না শুনলেও, হিন্দি কিংবা ইংরেজি গায়কদের ইতিহাসও জানে। তবে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনটা সবচাইতে ভয়াবহ হচ্ছে নারীদের ক্ষেত্রে। এদের উপর সবচাইতে বেশী আগ্রাসন চালাচ্ছে ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার গোল্ড, স্টার প্লাস, জি বাংলা, সনি আর্ট ইত্যাদি। এই চ্যানেলগুলোর সিরিয়ালের প্রতি এরা এতোটাই আকৃষ্ট যে, এইসব নারীদের সন্তান, স্বামী কিংবা অন্য যে কোন আপনজনরা অসুস্থ হয়ে কাতরায়, তবু এরা স্টার জলসা, জি বাংলা সিরিয়াল ছেড়ে উঠে আসতে চায় না।

আরেকটা বিষয়ে না বললেই নয়,সংগীতের বিশ্বায়নের নামে বাংলাদেশের অনেক মিডিয়ায় বিদেশী গানগুলো প্রচার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় শিল্পীদের বাদ দিয়ে বিদেশী শিল্পীদের দেশে এনে অনুষ্ঠান করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে।

আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাবে দেশীয় সংস্কৃতিতে আজ মহা বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী সুরসম্ভার হারিয়ে গেছে ইংরেজি আর হিন্দী সঙ্গীতের প্রভাবে। আজ বাংলাদেশের কোথাও বাংলা সঙ্গীত শোনা যায় না সবখানে হিন্দী আর ইংরেজি দখল করে নিয়েছে। বিয়ে, উৎসব, পিকনিক থেকে শুরু যে কোন আচার অনুষ্ঠানে আজ শুধু হিন্দী সঙ্গীতই শোনা যায়। এখানে বাংলা যেন নিষিদ্ধ। এখন আর আব্দুল আলীম, আব্বাস উদ্দিন কন্ঠের সেই পল্লী জীবনের যে হৃদয়গ্রাহী চিত্র ফুটে উঠত তা এখন আর শোনা যায় না। ব্যান্ড সঙ্গীতের নামে আমাদের নতুন প্রজন্মে শিল্পীরা যে চেচামেচির মহড়া দেয় তা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে না মোটেও। এরপরও একদল উঠতি যুবকের অবচেতন মনের দূর্বলতাকে পুঁজি করে এসবের বাজার দিন দিন সরগরম হচ্ছে। আগে যে একতারা, দোতরা, সারিন্দা. তবলা, ঢোল এবং বাঁশির সুরে বাঙালির হৃদয় আকুল হতো এখন গীটার আর কী বোর্ডের কর্কশ সুরের মাঝে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। আগেকার দিনে বেহুলা-লীন্দর, কমলা বনবাস কিংবা আলেমতি প্রেমকুমারের যে যাত্রাগান পালাগান হতো এবং গ্রাম বাংলার মানুষ রাতভর প্রাণ ভরে উপভোগ করতো, তাও এখন আর দেখা যায় না। এখন যুবক যুবতীদের প্রেম কাহিনী ছাড়া গান রচনা চিন্তাও করা যায় না। গানের ভাষাও ককর্শ, উচ্চ শব্দের কারণে বুঝাও যায় না গায়ক কি গায়।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন,এক সময় পোশাক পরিচ্ছদে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে তা আজ হারিয়ে গেছে। বিদেশী সংস্কৃতিক ব্যাপক প্রসার ও চর্চা আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিচ্ছদে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।

আমাদের তরুণ সমাজ আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। পশ্চিমা বিশ্বের জীবনাচরণকে মডেল বা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে। ছেঁড়া প্যান্ট, চুলের অদ্ভুত কাটিং, অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গিকে তথাকথিত আধুনিক হিসেবে জাহির করছে। আমাদের মেয়েদের অনেকেই স্বল্পবসনকে আধুনিক জীবনের নমুনা বলে মনে করে এর প্রতি চরম আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।

এটাও সত্য যে, প্রযুক্তির এই অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোনো কিছুই বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। তাই বলে ঘরে হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাও সমীচীন হবে না। তাই আমাদের বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ছুড়ে ফেলে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালোটা আমরা গ্রহণ করবো।তবে সবার আগে নিজেদের সাংস্কৃতিক ভিত মজবুত ও উন্নত করতে হবে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন,শিক্ষার একটা সংস্কৃতি আছে। শিক্ষার সংস্কৃতির নিহিত চাহিদা হলো মুক্ত পরিবেশ, অংশগ্রহণের অবাধ সুযোগ, প্রকাশের স্বাধীনতা।

শিশুদের মেধা ও মনণের বিকাশে সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। শিশুদের শুধু পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবন্ধ রাখবেন না। তাদের জন্য অবশ্যই খেলাধুলা , বিনোদন এবং সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে শিশু সামাজিক হবে এবং সহনশীল হতে শিখবে। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে ছোট বেলা থেকেই। না হয় বড় হয়ে নিজেদেরই সন্তানদের জন্য বিপাকে পড়তে হবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না,শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারাই আগামী দিনে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় তারাই নেতৃত্ব দেবে। জ্ঞানচর্চা ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে তুলবে সবার জন্য কল্যাণকর নতুন বিশ্ব। তাই শিশুদের প্রতি আমাদের বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া উচিত। তারা যেন সৃজনশীল, মননশীল ও মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্বের প্রতিটি মানুষের। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশু সুরক্ষার জন্য কার কী দায়িত্ব, তা নির্ধারণ করে দিয়ে এই দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পরিবার, স্কুল, মিডিয়া এবং সামাজিক সংগঠনগুলো শিশু সুরক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ড ও ইতিবাচক চর্চাগুলো নিশ্চিত করে।

তিনি বলেন, একদিকে আমাদের সন্তানরা আছে দুধে ভাতে। ভালো কাপড় পরিধান করছে, ভালো খাচ্ছে, ভালো স্কুলে যাচ্ছে। অন্যদিকে অসংখ্য বাংলা মায়ের সন্তানকে দেখি পথ শিশু বা টোকাই নামে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে। আমার সন্তান থাকবে দুধে-ভাতে আর অন্যের সন্তান থাকবে ফুটপাতে এটা বন্ধ করতে হবে। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের জেগে উঠতে হবে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/70fc
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন