English

25 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ৮, ২০২৫
- Advertisement -

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধানের ৪০ মিনিটের বৈঠক, বিভিন্ন মহলে কৌতূহল

- Advertisements -

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনীতিকসহ বিভিন্ন মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার খোঁজ নিতে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ বলা হলেও ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে করছেন বিশ্লেষক-রাজনীতিকসহ অনেকে। হঠাৎ সেনাপ্রধানের এ সাক্ষাৎ নিয়ে নানা আলোচনাও হচ্ছে। যদিও সাক্ষাতে দুজনের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি উন্নত চিকিৎসার জন্য শিগগিরই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। অসুস্থতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন গুলশানের বাসভবন ফিরোজার চার দেয়ালের মধ্যে রয়েছেন। মাঝেমধ্যেই চিকিৎসাসেবা নিতে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়। এর মধ্যেই সেনাপ্রধান সস্ত্রীক তার বাসায় গেলেন। খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রাক্কালে সেনাপ্রধানের এ সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হচ্ছে। সবাই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।

সাক্ষাতের ব্যাপারে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এটা জানায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এটা একান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সস্ত্রীক গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় যান। প্রায় ৪০ মিনিট সেনাপ্রধান তার বাসায় ছিলেন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কিছু সময় তারা একান্তে কথা বলেন।

সেনাপ্রধান খালেদা জিয়ার বাসভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর। খালেদা জিয়ার অন্য একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেন, ‘ওনারা একান্তে কথা বলেছেন। এ সময় বিএনপির অন্য কোনো নেতা  ছিলেন না।’

অবশ্য বিএনপির নেতারা সেনাপ্রধানের এই সাক্ষাৎকে ‘সৌজন্য’ হিসেবেই দেখছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। সে জন্য তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে সেনাপ্রধান সস্ত্রীক এসেছিলেন। যতটুকু জেনেছি, সাক্ষাতে ম্যাডামের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়েই কথাবার্তা হয়েছে, রাজনীতি বা অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, চিকিৎসার জন্য তাদের নেত্রীর বিদেশ যাওয়ার আগে সেনাপ্রধানের এই দেখা করার বিষয়কে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে এর আগে প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তিনি যাননি। তখন কোনো কোনো পত্রিকায় এমন খবর লেখা হয়েছিল যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি যাচ্ছেন না। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে হয়তো তার সঙ্গে সেনাপ্রধান দেখা করেছেন। এটা আমার ধারণা।’

মান্না আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে এটি একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা যায়। যদিও এর কোনো নিয়ম নেই। তবে এই সাক্ষাৎকে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই।’

এক-দেড় মাস ধরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। কয়েক দফা তারিখও নির্ধারণ হয়েছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে খালেদা জিয়া আগামী সপ্তাহে লন্ডনে যেতে পারেন বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিক বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। দীর্ঘ কারাভোগের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট তাঁকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি বাসায় ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দীর্ঘদিন একাকী থাকা খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে গেলে সেখানে বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তার পরিবারকে কাছে পাবেন। এ সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, ভবিষ্যৎ রাজনীতিসহ দলীয় বিষয়-আশয়েও কথাবার্তা হতে পারে। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে সেনাপ্রধানের এই সাক্ষাৎ নিয়েও অনেকের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই সাক্ষাতের মাধ্যমে সেনাপ্রধান কোনো রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে থাকতেন পারেন বলে আমার ধারণা। কারণ নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা ও অনিশ্চয়তার কথাও কোনো কোনো দিক থেকে বলা হচ্ছে। তাই নির্বাচন নিয়ে কোনো বার্তা দিয়ে থাকতে পারেন।’

এর আগে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেদিন সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও খালেদা জিয়ার সঙ্গে আন্তরিক কুশল বিনিময় করেন।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/9nqm
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন