English

25.9 C
Dhaka
সোমবার, জুলাই ১৪, ২০২৫
- Advertisement -

থমকে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ

- Advertisements -

প্রাথমিক অনুমোদনের পর প্রথম ধাপে ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। এরপর আট মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করার আশাবাদের কথা জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে গঠিত কমিটির প্রথম সভায় প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে গত ২৫ মার্চ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম দফার তালিকায় স্থান পায় ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম।

তালিকা প্রণয়ন কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তরুণ কান্তি ঘোষ বদলি হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর পুরো প্রক্রিয়াটি থমকে গেছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। নতুন সচিব খাজা মিয়ার বিষয়টিতে আগ্রহ নেই বলেও জানিয়েছেন কমিটির কয়েকজন সদস্য।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের জন্য গত বছরের ১৯ নভেম্বর গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব তপন কান্তি ঘোষকে এই কমিটির সভাপতি করা হয়। মন্ত্রণালয়ের তখনকার অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল হক ভূঁঞাকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। উপসচিব রথীন্দ্র নাথ দত্ত কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কমিটিতে গবেষক সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মেসবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষক গাজী সালাউদ্দিন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, গবেষক লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির (বীরপ্রতীক)।

কমিটির দায়িত্ব পালনের মধ্যে গত ৩০ মে তপন কান্তি ঘোষকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর তালিকা তৈরির কাজে ভাটা পড়ে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ হবে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা যেটুকু হয়েছে আমরা প্রকাশ করেছি। চূড়ান্ত করার কার্যক্রম এখনও সম্পন্ন হয়নি। আমরা আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করার কার্যক্রম শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।’

কমিটির সদস্য মুনতাসীর মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম তালিকা করার পর আর কিছুই হয়নি। কার্যক্রম চলমান থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমার জানামতে এরপর কোনো কাজ হয়নি। আগের সচিব চলে যাওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো মিটিং ডাকা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভলান্টিয়ারি কমিটি। কমিটির প্রধান উদ্যোগ না দিলে আমাদের কিছু করার থাকে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা ওখানে (তালিকা করার কমিটি) যেতাম না। গেছি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর জন্য এবং এটা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের কাজ তাই। মিটিং ডাকার ক্ষমতা সচিবের। আগের সচিব তপন কান্তির এ বিষয়ে আগ্রহ ছিল, তিনি ডেকে ডেকে কাজ করেছেন। আমরাও বলতাম, তিনি কাজ করেছেন। কিন্তু নতুন সচিবের সঙ্গে আমার এখনো কোনো কথাই হয়নি, দেখিওনি। যতটা জেনেছি নতুন সচিবের এটি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।’

তিনি বলেন, ‘তারা কমিটির সদস্যদের কোনো টাকা-পয়সা দেন না। পরামর্শ দিলে আটকাবে। পরে সব দোষ চাপাবে কমিটির ওপর। এটাই হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি (শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ) আর এগোয়নি। এর মধ্যে এ বিষয়ে আর কেউ বলেনি, আপনিই বললেন। এটা তো করা দরকার, ভালো জিনিস। আমি খবর নেবো এ বিষয়ে।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানাসহ মতামত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটিকে। কমিটিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন শহীদদের মধ্যে কারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন সেই সংজ্ঞা নির্ধারণ করতেও বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণা গ্রন্থ, পত্রিকার কাটিং, টিভি রিপোর্ট, অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটিকে। একই সঙ্গে কমিটিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা/জেলা/উপজেলা ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করতে বলা হয়।

কমিটি নির্ধারিত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা অনুযায়ী, যেসব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

কমিটি গঠিত হওয়ার পর ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রথম সভায় প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ১৯৭২ সালে এক হাজার ৭০ জন শহীদের তালিকা, পরে ডাক বিভাগ যে ১৫২ জন শহীদের ডাকটিকিট প্রকাশ করে সেই তালিকাও অনুমোদন দেওয়া হয় ওই সভায়।

এরপর চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ২৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম দফার তালিকায় ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম আসে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/cc6e
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন