অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। সাধারণ জনপনের সহযোগিতা পেলে এটিকে আরও সন্তোষজনক পর্যায়ে নিতে পারবও বলে আমি আশা করি।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ধামরাইয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় উৎসব ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা ও মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের বৈষম্য আর অনিয়ম দূর করে দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ সরকারের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে সব অনিয়ম ও বৈষম্য দূর করতে হবে। সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। সেই জন্য সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমান কাল ধরে এ দেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশার মানুষ পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রেখে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। রথযাত্রা হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এ উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা-ধনী-গরীব নির্বিশেষে অনেক দর্শনার্থী আসেন এবং অনুষ্ঠানে শরিক হন। এটি এ ভূখন্ডের মানুষের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন।’
রথযাত্রার ইতিহাস নিয়ে তিনি বলেন, ‘যতোদূর জানা যায়, আমাদের এই উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকে রথযাত্রা অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এই রথযাত্রা পালিত হচ্ছে সুদীর্ঘকাল ধরে। এই অনুষ্ঠানটি আমাদের দেশে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ধামরাই-র রথযাত্রাটি যশোমাধবের রথযাত্রা হিসেবেই সবাই জানে। এর কারণ হিসেবে জানতে পেরেছি একই দেবতার বিভিন্ন নামের কারণে রথযাত্রা অনুষ্ঠানের এই একাধিক পরিচিতি। নাম যা-ই হোক, আমাদের দেশে এই অনুষ্ঠানটি পঞ্জিকা অনুসরণ করে আষাঢ় মাসের একটি নির্দিষ্ট তিথিতে সর্বত্র অনুষ্ঠিত হয়।’
সবশেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশা করব, আপনারা নিঃসংকোচে এবং নির্ভয়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে যাবেন। বর্তমান সরকার আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে।’
শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান (পিপিএম), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন আহমেদ অনিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সুলতানা আহমেদ, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নাজমুল হাসান অভি।
বক্তব্য শেষে হিন্দু ধর্মীয় সব আনুষ্ঠানিকতা মধ্য দিয়ে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে রথযাত্রা ও মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। রথযাত্রায় দেশ ও দেশের বাইরে থেকে হাজার হাজার ভক্তরা যোগদান করেছেন।