জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসন বিশিষ্ট- এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আর এই সদস্যরা মনোনীত হবেন সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে। এর অর্থ হলো- জাতীয় নির্বাচনে দলগুলো যে ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন করা হবে।
তবে এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং জোটগুলো। তারা বলেছে, উচ্চকক্ষে সদস্য মনোনীত হতে হবে জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে।
এদিকে, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য মনোয়নের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব করলে আলোচনায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের উদ্দেশে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কটাক্ষ করে বলেন, “২৩ সালে কোথায় ছিলেন?”
মূলত তার এ মন্তব্যের পরই সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে ক্ষমা চান এহসানুল হুদা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২৩তম দিনের সংলাপের একপর্যায়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গেছে, বেলা ১টা ৫০ মিনিটের পরে পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে দিতে চান না।
উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা অনির্বাচিত হবেন উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পৃথিবীর কোনও দেশেই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকে না।
তার বক্তব্য শেষ হলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ভোটের সংখ্যানুপাতিকের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সেটি তো জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন হয়। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাসিন।
তখন সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি ব্যাখ্যা দেন। তখনই জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়াই জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ করে বলেন, “২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?” তখনই জাবেদ রাসিন তার প্রতিবাদ করেন (মাইক ছাড়াই) এবং এ নিয়ে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়।
তাদের দু’জনই মাইক ছাড়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন।
এ সময় কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে, কেন এসেছি, সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ, আজকে যদি সে প্রশ্ন করেন, তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাকেও সে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।”
তারপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “তিনি (এহসানুল হুদা) এই কথা বলতেই পারেন না।”
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ তার পিঠ চাপড়ে থামতে অনুরোধ করেন। আখতার তখন বলতে থাকেন, “আমরা বাচ্চাকাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি।”
এ পর্যায়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “কারও লোকাস স্ট্যান্ডি (অধিকার/ সামর্থ্য) নিয়ে প্রশ্ন করার দরকার নেই। প্রত্যেকের লোকাস স্ট্যান্ডি আছে বলেই আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি।”
এ সময় আখতার বলেন, “গায়ের জোরে এসব প্রশ্ন করলে তো আমরা মানব না।”
আলী রীয়াজ তখন বলেন, “আমি তো হস্তক্ষেপ করলাম।”
আখতার তখনও বলতে থাকেন, “সবাইক নিয়ে আমরা গণ–অভ্যুত্থান করেছি। গোটা অভ্যুত্থানে ছাত্র–জনতা মাঠে নেমে এল, সেটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটার জন্য ওনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমেদকে বলতে শোনা যায়, “আচ্ছা হুদা ভাই, আপনি স্যরি বলেন।”
এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জেনায়েদ সাকি এ বিষয়ে কথা বলতে উঠে দাঁড়ালে আলী রীয়াজ তাকে অনুরোধ করে বসিয়ে দেন।
এরপর সালাহউদ্দিন আহমেদ এহসানুল হুদাকে উদ্দেশ করে বলেন, “কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকে তার জন্য স্যরি বলেন।”
তখন এহসানুল হুদা মাইক নিয়ে বলেন, “আমি বলতে চেয়েছিলাম, ২০২৩ সালে আমরা উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন সে প্রস্তাবটি (পিআর) কোথায় ছিল? তারপরও কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, আমি দুঃখিত।”
এরপরই আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ঘোষণা করেন। বিরতির সময়ে সম্মেলনকক্ষে এহসানুল হুদাকে আবার আখতারের কাছে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তার সঙ্গে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। তখন হুদাকে বলতে শোনা যায়, “আমার অনুরোধ, আমরা এটা নিয়ে আর সিনক্রিয়েট না করি। আমার আপনাদেরকে নিয়ে প্রশ্ন করার ইনটেনশন (উদ্দেশ্য) ছিল না।”
তখন পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, আপনার এটা নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। পরে আখতার এহসানুল হুদাকে জাবেদ রাসিনের সঙ্গে কোলাকুলি করিয়ে দেন।