জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, রাজনৈতিক সালিশের সুযোগ দিয়ে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ কেউ প্রশস্ত করছে কি না—তা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা, আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এসব মন্তব্য করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী একটা দল মন্তব্য করে ওই স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে আর্মিকে রাজনৈতিক সালিশের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমরা এখনো ওয়ান-ইলেভেনের ইতিহাস ভুলে যাইনি, এখনো তারেক রহমানের নির্যাতনের ঘটনা আমাদের স্মরণে রয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা সতর্ক পাহারাদার। দেশের প্রয়োজনে, সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনে, আমরা প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে ২০২৪-এর অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে আমরা মেনে নেব না। রাজনৈতিক সালিশের সুযোগ দিয়ে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ কেউ প্রশস্ত করছে কি না—তা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেন নিজেরাই বিভাজনের পথ বেছে নিয়ে অন্য কাউকে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ না দিই। বাইরের কাউকে রাজনৈতিক মাতব্বরি করার সুযোগ দিয়ে দেশের শুদ্ধ গণতান্ত্রিক সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে না ফেলি। বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে আধিপত্যবাদবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে এক হতে হবে। ’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে পাশে পাওয়া ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতেও সব পক্ষকে এক থাকতে হবে। এই দাবিতে বড় কোনো দলের নির্লিপ্ততা আমাদের হতাশ করে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা, আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। ক্ষণস্থায়ী ফায়দা লুটতে গিয়ে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বিপুল সম্ভাবনার জনআকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করা হলে, তা হবে একটি ঐতিহাসিক ব্যর্থতা। ’
এনসিপিকে নির্বাচনবিরোধী আখ্যা দিয়ে সচেতনভাবেই এক ধরনের কলঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন হাসনাত। পাশাপাশি দুই ছাত্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করার চক্রান্ত চলছেও বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়—এমন গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করার নানা কার্যক্রমও চলমান। এই চক্রান্ত কয়েকটি দিক থেকে পরিচালিত হচ্ছে। অথচ এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। গতকাল (২১ মে) এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন— ‘প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত যে সময় দিয়েছেন, আমরা সেটিকে সমর্থন করেছি। এর মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে আমরা এর মধ্যে বিচার ও সংস্কারের কথা বলেছি। ’ অন্যদিকে, ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গত ১০ মে বলেন— ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই। ’ তিনি একাধিকবার নির্বাচন বিষয়ে এই অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
তিনি প্রশ্ন ছুড়েন, ‘তারপরও দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা এবং ইন্টারিম সরকারের অংশ হওয়া দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া মোটেই স্বাভাবিক কোনো বিষয় বলে মনে করি না। ’