English

23 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫
- Advertisement -

৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: সড়ক নিরাপত্তায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাইলো নিসচা

- Advertisements -

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। রাজধানীতে র‍্যালি ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে সংগঠনের সদস্যরা সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সড়ক নিরাপত্তায় রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে গেলে কী কী করবে- সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রাজনৈতিক ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে তা জাতির সামনে তুলে ধরতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও জোরালো আহ্বান জানানো হয়।

সকাল ১১টায় কাকরাইলে নিসচার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত একটি র‍্যালি বের হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ। এরপর নিসচার মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন র‍্যালির সূচনা করেন। র‍্যালিতে অংশ নেন নিসচার উপদেষ্টা, আজীবন সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধি ও সমমনা সংগঠনের নেতারা। র‍্যালিটি কাকরাইল হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। বর্তমান সময়ে সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, চালকদের প্রশিক্ষণ ও আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি।

বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩২ বছরে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে নিসচা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ কার্যক্রম, জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, স্কুল-কলেজে নিরাপদ সড়ক শিক্ষা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সড়ক নিরাপত্তা খাতে অবদান রাখছে। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নিসচা অঙ্গীকারবদ্ধ। সংশ্লিষ্ট সংস্থা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও নাগরিক সমাজকে সমন্বিতভাবে নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বিশেষ করে সড়ক নিরাপদ নিশ্চিত করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এ কে আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব আব্দুর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম খান, কামাল হোসেন খান, আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপক কুমার সরকার, প্রচার সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমান, প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মহসিন খান, কার্যকরী সদস্য নাসিম রুমি, আক্তার হোসেন, কামরুজ্জামান প্রমুখ। এছাড়া শাখা কমিটির মধ্যে সাভার পৌর, আশুলিয়া, শাহ আলী, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ, রোভার স্কাউট, বয়েজ স্কাউটসহ সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐক্য দরকার

র‌্যালি শেষে সমাবেশে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লিটন এরশাদ বলেন, নিসচার ৩২ বছরের পথচলায় সড়ককে নিরাপদ করতে অভিজ্ঞতা কম নয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দেখেছি, কোথায় যেন একটা অদৃশ্য বলয় কাজ করে, পরিবহন সেক্টরটাকে গিলে খেয়ে আখের গোছাতে থাকে। আর তখনই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিলে পরিবহন সেক্টর থেকে বড়-সড় বাধার সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে সরকারকেই বলতে শোনা যায় তারা অসহায়। কারণ পরিবহন সেক্টর যারা লিড দেন তাদের সবাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট। এ অবস্থায় নিসচা মনে করে, সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে নিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐক্য। বিশেষ করে করোনা দুর্যোগকে মাথায় রেখে সকল মত পক্ষ, শ্রেণি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতির কাছে অঙ্গীকার করতে হবে। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক ইশতেহারে গুরুত্ব দিয়ে সড়কে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। পাশাপাশি সকল দলের স্থায়ী ইশতেহারে সড়কে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দিকটি প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের মানুষের কাছে এ বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার করতে হবে। আগামী সংসদে সকল দল মিলে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একমত থেকে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করতে হবে। তবেই সকল উদ্যোগ কার্যকর হবে বলে আমরা মনে করি।

সমাবেশে মহাসচিব এস এম আজাদ সড়ক নিরাপত্তায় পাঁচটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি বলে মত দেন। তিনি বলেন- আইন কঠোরভাবে প্রয়োগে কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। একটি শক্তিশালী সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের অধীনে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশনের সমন্বয় জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবহন খাত তৈরি করতে হবে। মালিক-চালক সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক ছত্রছায়া থেকে সরিয়ে পেশাভিত্তিক নীতিতে আনতে হবে। সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। মান যাচাই, হঠাৎ পরিদর্শন এবং অনিয়ম ধরা পড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বাস্তব পদক্ষেপ থাকতে হবে। গণপরিবহনে আধুনিকায়ন ও রুট র‍্যাশনালাইজেশন চালু করতে হবে। বাসের প্রতিযোগিতামূলক দৌড় বন্ধ করতে রুটভিত্তিক শৃঙ্খলা ও একীভূত টিকিটিং ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার। শিক্ষা, সচেতনতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। স্কুল-কলেজে সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, স্মার্ট ট্র্যাফিক সিস্টেম, সিসিটিভি ও ডিজিটাল মনিটরিং বাড়ানো দরকার।

এস এম আজাদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সড়ক নিরাপত্তার মূল চালিকাশক্তি। শুধু আইন বা প্রকল্প দিয়ে সড়ক নিরাপদ হয় না। এজন্য প্রয়োজন শক্তিশালী রাজনৈতিক সংকল্প। যে সরকার সড়ক নিরাপত্তাকে ‘জাতীয় অগ্রাধিকার’ হিসেবে ঘোষণা করবে এবং প্রয়োজনে ভোট–ঝুঁকি নিয়েও পরিবহন খাত সংস্কারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সরকারের সময়েই সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ প্রতিদিন ঘর থেকে বের হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এটি কোনো সভ্য সমাজের চিত্র নয়। নিরাপদ সড়ক নাগরিকের অধিকার। এটা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

দেশের সড়ক নিরাপদ তখনই হবে যখন রাজনৈতিক সদিচ্ছা অটল থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বহু সংকট থেকে উত্তরণ দেখেছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠার নানা আন্দোলন এর প্রমাণ। সড়ক নিরাপত্তাও সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে, যদি নেতৃত্ব সত্যিকার অর্থেই সড়ককে মৃত্যুফাঁদ থেকে মুক্ত করার ঘোষণা দেয়। সময় এসেছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়ার- সড়ক নিরাপত্তা দয়া নয়, এটি জাতীয় অগ্রাধিকার। সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে, কারণ প্রতিটি জীবনই অমূল্য, তা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/5g77
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন