আজ ২৪ ডিসেম্বর, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তি, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ খ্যাত নায়ক এবং দেশের স্বনামধন্য জাতীয় সামাজিক সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)–এর কর্ণধার, একুশে পদকপ্রাপ্ত মানবিক নেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের শুভ জন্মদিন।
প্রতিবছরের মতো এবারও ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে ভিন্ন এক মানবিক ধারায়—কেক কাটা নয়, সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে। তাঁর সুস্পষ্ট নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় নিসচা’র শাখা ও কাঞ্চনভক্তরা এতিমখানায় দোয়া মাহফিল, এতিমদের একবেলা খাবার বিতরণ, শীতবস্ত্র ও হুইলচেয়ার বিতরণসহ নানা সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি পালন করবে। একইসঙ্গে সারাদেশে নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, ২৪ ডিসেম্বর ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিন উপলক্ষে নিসচা প্রধান কার্যালয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের এই নায়ক ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাজী আব্দুল আলী এবং মাতা সরুফা খাতুন।
শিক্ষাজীবনে তিনি ১৯৭৫ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
চলচ্চিত্রে পথচলা
কৈশোর থেকেই অভিনয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ থেকে বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন ইলিয়াস কাঞ্চন। কিংবদন্তি নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’ (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়িকা ববিতার বিপরীতে তাঁর রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে।
নব্বইয়ের দশকে তিনি হয়ে ওঠেন ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন। ৩৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা এই অভিনেতার অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ (১৯৮৯) আজও বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেছেন।
মানবিক আন্দোলনের পথিকৃৎ
স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে তিনি গড়ে তোলেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলন। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই আন্দোলনের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা, শিক্ষিত চালক তৈরি, দুর্ঘটনা রোধ ও সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।
এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘একুশে পদক’ প্রদান করে। চলচ্চিত্র অঙ্গনে সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি তিনি।
আজ নিসচার দাবির প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। নিসচার কার্যক্রম এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও একটি অনন্য সামাজিক আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বাস্তবের মহানায়ক
রূপালি পর্দার সুপারস্টার থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন আজ বাস্তব জীবনের নায়ক, কোটি মানুষের হৃদয়ের মহানায়ক। তিনি শুধু একটি নাম নন—তিনি একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস, একটি অনুপ্রেরণা। ব্যক্তিজীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক ও মানবিক এক মহৎপ্রাণ মানুষ।
ইলিয়াস কাঞ্চন বাংলার আকাশের এক ধ্রুব নক্ষত্র—এই দেশে এমন মানুষ একবারই জন্ম নেয়।
শুভ জন্মদিন রাজপথের শান্তির প্রতীক। তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও মানবিক পথচলার ধারাবাহিকতা কামনা করছে দেশবাসী।
