শুক্রবার সন্ধ্যায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যাগে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সফিউদ্দিন মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সুস্থতা কামনা করে এবং সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিল এবং আলচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে প্রেসক্লাবের সামনের ব্যস্ততম রাস্তায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচীও পালন করা হয়।
সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে নিরাপদ সড়ক চাই মুন্সিগঞ্জ জেলার সভাপতি মোঃ আতিকুর রহমান টিপুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী এস এম আজাদ হোসেন,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট সংগঠক ব্যারিস্টার আফরোজা ফিরোজ মিতা, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর বাছির উদ্দিন জুয়েল, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রশিদ মামুন, সাবেক সভাপতি কাজী সাব্বির আহম্মেদ দীপু, মোঃ রাসেল মাহমুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু সাইদ সোহান, দপ্তর সম্পাদক মু মাসুদ রানা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা,জনতার মহানায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গত ৩২ বছর ধরে সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন,একাজে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই মূল বাধা। তিনি উল্লেখ করেন-বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৬০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।এতে বছরে প্রাণ হারান কয়েক হাজার মানুষ।আহত ও পংুত্ব বরণ করেন প্রায় অর্ধালক্ষাধিক-এই সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে একটি পরিবার, এক বা একাধিক ভাঙা স্বপ্ন। অথচ দুর্ঘটনার খবর আমরা এখন এমনভাবে গ্রহণ করি, যেন এটি দেশের নিত্যদিনের রুটিন। বাস্তবতা হলো, সড়কে মানুষ মারা যাচ্ছে শুধু চালকের বেপরোয়া আচরণে নয়, বরং আমাদের নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দীর্ঘস্থায়ী উদাসীনতায়।
বাংলাদেশে সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে প্রতিটি সরকার বড় বড় ঘোষণা দেয়-ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে, টোল হাইওয়ে-এসব প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু প্রাণহানি কমেনি। কেন? কারণ আমাদের রাজনীতি এখনো ‘রোড সেফটি’কে ভোটের ইস্যু হিসেবে দেখেনি। দলীয় প্রতিশ্রুতির তালিকায় শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কৃষির মতো সড়ক নিরাপত্তা জায়গা পায় না। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর যত মানুষ মারা যায়, তা ডেঙ্গু, আগুন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে বেশি।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা মানে কেবল নতুন আইন প্রণয়ন নয়-বরং কঠোর প্রয়োগ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়, এবং দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, বড় দুর্ঘটনার পর কিছুদিন শোক আর ক্ষোভের আবহে সরকার বা দলীয় নেতা-মন্ত্রীরা আশ্বাস দেন, তারপর সবকিছু আবার আগের জায়গায় ফিরে যায়।
তিনি বলেন,রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষাকে প্রাথমিক স্তর থেকেই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যেত। চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা চালু করা যেত। অথচ আজও অনেক চালক বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই বড় যানবাহন চালাচ্ছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সত্যিকারের সদিচ্ছা থাকত, তবে তারা এমন নীতিমালা করতেন,যেখানে লাইসেন্স দেওয়া হতো না ঘুষে, বরং দক্ষতা যাচাইয়ের মাধ্যমে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পরিবহন খাত আসলে একধরনের অঘোষিত রাজনৈতিক সাম্রাজ্য। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা পরিবহন মালিক বা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মানে দলীয় কাঠামোর ভিত নাড়া দেওয়া। এই বাস্তবতায় কোনো সরকারই কঠোর হতে পারে না, কারণ সড়কই এখন রাজনীতির অর্থনৈতিক শিরা।
তবে এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হলে সর্বদলীয় সমঝোতা প্রয়োজন। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে একটি ‘জাতীয় রোড সেফটি কমিশন’ গঠন করতে হবে, যার কাজ হবে-সড়ক আইন বাস্তবায়ন,যানবাহন মান নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা পরবর্তী তদন্ত নিশ্চিত করা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সংগঠক ব্যারিস্টার আফরোজা ফিরোজ মিতা বলেন,দেশের বাইরে গেলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে আক্ষেপ হয়,তিনি বলেন আমাদের সড়কে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় যত মানুষ নিহত হচ্ছেন তার ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়।তিনি নিসচার কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং নিজেকে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর বাছির উদ্দিন জুয়েল বলেন,মুন্সীগঞ্জ শহরে ব্যাটারীচালত রিক্সা,ভ্যান,অটোর দৌরাত্ব এতটা বেড়েছে যে,পথচারিদের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে,ধুর্ঘটনা ঘটছে,দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।এই সমস্যা নিরসনে তিনি রাজনৈতিক দলগুলির কমিটমেন্ট প্রত্যাশা করেন।
নিরাপদ সড়ক চাই মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইফুর রহমানের সঞ্চালনায়
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সহ সভাপতি এ্যাড. জানে আলম প্রিন্স, মোঃ মাহবুব আলম লিটন, মোঃ জিয়াউর রহমান,আতিকুর রহমান নান্নু,অর্থ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন হোসেন রাজ মল্লিক, দপ্তর সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মোল্লা, যুব বিষয়ক সম্পাদক মোঃ লিটন শেখ, কার্যকরী সদস্য আব্দুল কাইউম রতন, কার্যকরী সদস্য মোঃ জাহান শরীফ, কার্যকরী সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন, কার্যকরী সদস্য মোঃ কামাল হোসেন, কার্যকরী সদস্য মোঃ নাজমুল হাসান মুন্সি প্রমুখ।
