English

28.9 C
Dhaka
বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫
- Advertisement -

‘অন্ধ মেয়েটি মুগ্ধ হয়ে শুধু বললো, এত ভালো পুলিশ এর কথা আমি আগে কখনো শুনিনি!!’

- Advertisements -

মানুষ মানুষের জন্য,সবার মনে কি আছে জানে অন্তর্যামী, এবার বলবো এক অন্ধ মহিলার জীবন কাহিনী।
নাম: মোছাম্মদ মুনিয়া (২২), জন্মদাতা মোকছেদ খন্দকার, মাতা মৃত আঙ্গুরী বেগম, গ্রাম দেওগ্রাম দক্ষিণ পাড়া, থানা কাহালু, জেলা বগুড়া। হতভাগী মুনিয়ার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন খেলাধুলা করার সময় সহপাঠীর ধান কাটা কাঁচির আঘাতে তার ডান চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসা করেও তার চোখ ভালো হয়নি।
পরবর্তীতে এক চোখের আলোয় জীবন চলতে থাকে মুনিয়ার। বিধিবাম হলে যা হয়, ডান চোখ নষ্ট হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে তার বাম চোখ ও নষ্ট হয়ে যায় ২০১৫ সালে। এবার মুনিয়ার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার দুনিয়া! দুটি চোখ অন্ধ হয়ে যায়। দিন যায় মাস যায় এভাবে কেটে যায় দুই বৎসর।
এরমধ্যে ২০১৮ সালে মুনিয়ার মা মুনিয়াকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। মনিয়া হয়ে পড়ে অসহায়। মুনিয়ার জন্মদাতা পিতা মুনিয়ার খেয়াল না করে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মা হারা অন্ধ মুনিয়া হয়ে যায় দিশেহারা। তার জীবন থেকে মুছে গেল মায়ের ভালোবাসা আর বাবার আশীর্বাদ, শুরু হলো অবহেলা আর অযত্ন।
এদিকে মুনিয়া ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। হঠাৎ একদিন মুনিয়া তার বুকের ডান পাশে হালকা ব্যথা এবং মাংস গোটা অনুভব করে। অনেক চেষ্টা করে এলাকার লোক এর সহায়তায় সে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়, ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অন্ধ মুনিয়ার ব্রেস্ট টিউমার হয়েছে বলে জানায়। অন্ধ মুনিয়া মনের দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়ে যায়। ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন মোতাবেক মুনিয়াকে (FNAC) টেস্ট করানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। যে কোনো কারণেই হোক গত তিনমাস মুনিয়া এই টেস্ট করাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে তার গ্রামের একলোক তাকে মেডিকেলে আসার কথা বলে এবং সেই লোক হাজির থেকে উক্ত টেস্ট করিয়ে দিবে মর্মে ওয়াদা করেন। মুনিয়া তার কথা বিশ্বাস করে দুর্গাপুর থেকে বাসযোগে বগুড়া মেডিকেলে চলে আসেন।
মেডিকেল এর আউটডোরের পাশে ওই লোকটির অপেক্ষায় সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে সেই লোকের দেখা না মিললে মুনিয়ার মনে পড়ে যায় 999 এর কথা।
মুনিয়া বুদ্ধি করে তার নিজের মোবাইল থেকে 999 এ ফোন করে বগুড়া সদর থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন। সদা সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর মতো ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বারে মুনিয়ার ফোন পেয়ে, সদর থানার ডিউটি অফিসার আমার নাম্বার দিয়ে দেন। অবশেষে মুনিয়া আমার নাম্বারে ফোন করে বলেন, আমি একজন অন্ধ মানুষ ডাক্তার আমাকে একটা টেস্ট দিয়েছেন সেটা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় তলায় হয়, আপনি আমার কাছে আসেন এবং সেখানে আমাকে নিয়ে যাবেন।
আমি কালবিলম্ব না করে মুনিয়াকে খুঁজতে থাকি, লোকেশন জটিলতার কারণেই মুনিয়াকে পাইতে আমার কিছুটা বেগ পেতে হয়। অবশেষে চতুর্থ লোকেশন মেডিকেল কলেজের মেইনগেট জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে মুনিয়া কে খুঁজে পাই। মুনিয়ার মুখে সবকিছু শোনার পরে জানতে পারলাম মুনিয়া কারো হাত না ধরে হাঁটতে পারে না। তারপর মুনিয়ার হাত ধরে অটো রিকশায় করে মেডিকেল কলেজ এর দ্বিতীয় তলায় পৌছালাম।
যাবতীয় কার্যক্রম শেষে আবার তাকে দুর্গাপুরের বাসে উঠিয়ে দিলাম। বাসে উঠার আগে মুনিয়া জানতে চাইলো যে আমি কি করি।
মুনিয়াকে বললাম, আমি পুলিশের চাকরি করি। মুনিয়া বললো, এতক্ষণ কি আমি একটা পুলিশের হাত ধরেছিলাম? আমি বললাম হ্যাঁ। মুনিয়া বললো এত ভালো পুলিশ এর কথা আমি আগে কখনো শুনিনি…।
যাই হোক প্রতিনিয়ত যে ভালো কাজগুলো আমরা করছি তার পাশাপাশি আজকে একটি অতি উত্তম কাজ করলাম।
উল্লেখ্য যে, মুনিয়ার দুটি চোখ নষ্ট হবার পর ভুল চিকিৎসা এবং মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন করার কারণে মনিয়ার পুরো শরীরে ঘা হয়ে যায়, ‌ঘা ভালো হবার পর কাল্পনিকভাবে তার পুরো শরীর সাদা হয়ে যায়। মুনিয়াকে প্রথমে দেখলে কুষ্ঠ রোগী মনে হয়, কিন্তু আসলে মুনিয়া কুষ্ঠ রোগী নয়। ভালো থাকবেন সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য যেন সারা জীবন মানুষের উপকারে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি।
আব্দুল আজিজ মন্ডল
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/qpug
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন