English

31 C
Dhaka
শনিবার, মে ৪, ২০২৪
- Advertisement -

‘মুক্তিযুদ্ধে কবরী’

- Advertisements -

আমাদের প্রিয় অভিনেত্রী কবরীকে গতকাল (১৮ এপ্রিল) একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়েছে। তারপর তার দাফন কার্য সম্পন্ন হয়েছে। কবরী মুক্তিযোদ্ধা কিনা, তাকে কেন রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদান করা হলো এ নিয়ে একাধিক পোষ্ট আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই কবরী মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। একবার আমি কবরীদিকে ঢাকার একটি পত্রিকার জন্য মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকার কথা লিখতে বলেছিলাম।

Advertisements

নিজের কলমে তিনি তার মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জীবন বিধৃত করেছিলেন। সেখানে একজন শিল্পী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণের কথা প্রকাশ পেয়েছিল। দেশবরেণ্য এ শিল্পীর হস্তলিপি আমি সযত্নে সংরঋণ করেছিলাম। আজ সময়ের বাস্তবতায় তা সবার সামনে তুলে ধরছি।

৮৮-এর ১৬ডিসেম্বর প্রকাশিত সেই লেখায় তিনি লিখেছিলেন-৭১ এর ১৯ এপ্রিল সাবরুম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমি প্রথমে পৌঁছি আগরতলা। তারপর সেখান থেকে যাই কলকাতায়। সেখানে বাংলাদেশ মিশনের সামনে আয়োজিত এক সভায় শরণার্থীদের দু্র্দশা এবং হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের নিষ্ঠুর গণহত্যার বিবরণ দিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে সারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাই।পাকিস্তানের জেলখানা থেকে বংগবন্ধুকে মুক্ত করতেও সচেষ্ট হওয়ার জন্য আমি বিশ্ব বিবেকের প্রতিআবেদন জানিয়েছিলাম।

আকাশবাণী আমার সেই বক্তৃতা প্রচার করেছিল। কোলকাতা,দিল্লী,বোম্বে ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে স্বাধীনতার জন্য জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সভার আয়োজন করেছিলাম। ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিক হেমবতী নন্দন বহুগুণা এক জনসভায় বলেছিলেন,কবরী আমাদের বোনের মত। তিনি আমাদের কাছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে আমি নিজে রক্ত দিয়েছিলাম এবং অনুষ্ঠানাদি করেও রক্ত সংগ্রহ করেছিলাম।

নীতিশ সাহার কাছে কবরীর হস্তলিপি সযত্নে সংরঋণ আছে
Advertisements

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে তখন একটি ডিস্ক রেকর্ড বের হয়েছিল নাম ছিল -‘আমি মজিদের মা বলছি’। ঐ রেকর্ডটি পরিচালনা করেছিলেন বরেণ্য সংগীত পরিচালক সলিল চৌধুরী,কণ্ঠ দিয়েছিলাম আমি। তবে ৭১এ আমাদের দেশ মাতৃকার শৃংখল মোচনে আমি যেসব উদ্যোগ নিয়েছিলাম তাতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছিলেন কৃতী চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়, শক্তি সামন্ত,তারাপদ বারজাতিয়া, চিত্র প্রযোজক অশোক সেন, চিত্রনায়ক উত্তম কুমার, অশোক কুমার, ধর্মেন্দ্র, সাংবাদিক কলি পাল সহ আরও অনেকে।তাঁদের সহায়তার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক আই এস জোহর ‘ জয় বাংলাদেশ’ নামে একটি ছবি তৈরি করেন,তার নায়িকা ছিলাম আমি। অভিনয়ের যে টাকা আমি ঐ ছবিতে পেয়েছিলাম তার পুরোটাই বাংলাদেশ মিশনকে দিয়ে দিয়েছিলাম। একবার মহানায়ক উত্তম কুমারের সাথে দেখা করলাম। তিনি বললেন একটি ছবি করে তা থেকে যা টাকা পাওয়া যাবে তা দিয়ে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সহায়তা করতে পারি। তবে সে ছবির নায়িকা হতে হবে আপনাকে।

আমি সানন্দে রাজি হলাম।পরে অবশ্য দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় ছবিটি আর করা হয়নি। ওখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেওয়ালী উৎসবের দিন আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলাম। একবার ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করার জন্য তাঁর একান্ত সচিব শ্রী হাকসারকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী তখন ছিলেন খুবই ব্যস্ত। তবু আমাকে চিঠি লিখে তিনি বলেছিলেন,’অবসর হলেই আমি তোমাকে ডাকবো।’ দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় সে সুযোগ আর মেলেনি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন