জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা সেদিনই শান্তি পাব, যেদিন আমাদের চোখের সামনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হতে দেখব।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সারাদেশের মানুষকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী ছাত্রজনতা এবং গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। জুলাই গণঅভ্যুত্থনে সংঘটিত যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে আজ সেই অপরাধের রায় এসেছে। আপনারা আমরা সকলেই জানি, সেই রায়ে খুনি, স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা এ রায়কে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, জুলাই-আগস্টে যে ন্যায়বিচারের জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম, আমার ভাই আবু সাঈদকে যেদিন হত্যা করা হয়েছিল ১৬ জুলাই, সেদিন শপথ নিয়েছিলাম এ হত্যার বিচার আদায় করেই ছাড়ব আমরা।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের হাজারো শহীদ এবং কয়েক হাজার আহত যোদ্ধার ওপর যে জুলুম করা হয়েছিল, সেই জুলুমের রায় আজকে আমরা পেয়েছি। বিগত ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন করেছিল- গুম, খুন, মানবাধিকার হরণ, ভোটাধিকার হরণসহ পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা এবং জুলাইয়ের গণহত্যা- এ সবকিছুর বিচারের রায় আমরা পেয়েছি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, তবে আমরা শুধু এ রায়ে সন্তুষ্ট না। আমরা দাবি জানাচ্ছি- এ রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে এবং অবিলম্বে দিল্লি থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে হবে। সেটার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযথ ভূমিকা এবং কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা শুনেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারত সফর করছেন। আমরা আশা করি, তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।
এনসিপির এ নেতা বলেন, শেখ হাসিনা খুন, গুম এবং গণহত্যার দায়ে দণ্ডিত অপরাধী। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম খুনি, রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যে অপরাধগুলো করেছিল- সেই বিচারের লড়াইয়ে আমরা এক ধাপ এগোলাম। শুধু শেখ হাসিনা না, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা এই রায় কার্যকর চাই। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদেরও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এনসিপি রাজপথে থাকবে। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন ও সংস্কারের দাবিতে আমরা এক দফা ঘোষণা দিয়েছিলাম, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্থান ঘটে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিগামী ছাত্রজনতা যারা জুলাই–আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রেখেছেন- আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও ধন্যবাদ জানাই। এ রায় আসার পেছনে তাদেরও অবদান রয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের রায়ে ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হলেও এটি প্রমাণ করে- তিনি শুধু হিসেবে ব্যক্তি নন, দলীয় ও সরকারি প্রধান হিসেবেও গণহত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন। সুতরাং আওয়ামী লীগ দল হিসেবেও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত।
