গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে দিল্লিতে অবস্থান করছেন, ঠিক সেই সময়ে ঢাকায় তার কলরেকর্ড মুছে ফেলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তদানীন্তন মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, লোক পাঠিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় এনটিএমসির সার্ভার থেকে মুছে দেওয়া হয় শেখ হাসিনার চারটি ফোন নম্বরের মালিকানার তথ্যসহ অন্তত এক হাজার কলরেকর্ড।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যখন ভারতের দিল্লিতে আশ্রয় নেন, সেসময় তার কলরেকর্ড মুছে ফেলার কাজটি করে এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। এই নম্বরগুলোর মুছে ফেলা ডিজিটাল এভিডেন্স উদ্ধারে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ফোন থেকে কলডেটা মুছে ফেলার ঘটনাটি নজিরবিহীন। এই সংখ্যা আমি সরাসরি উল্লেখ করছি না। তবে ঘটনাটি ঘটেছে এনটিএমসিতে। আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট কেন বন্ধ করা হয়েছিল-সে বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাই। আমরা ডেটা মোছায় এনটিএমসির ইনভলমেন্ট পাই। আমরা তথ্য পেয়েছি, জিয়াউল আহসানের নির্দেশে এনটিএমসির চুক্তিভিত্তিক কিছু কর্মকর্তা ডিজিটাল আলামত মুছে ফেলেন।
তানভীর হাসান জোহা বলেন, ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় এনটিএমসির সার্ভার থেকে মুছে দেওয়া কলরেকর্ড উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সাবেক এক পরিকল্পনা মন্ত্রীর কল রেকর্ডও মুছে ফেলা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ উদ্ধার করেন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা। যেখানে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলিসহ নানা নির্দেশনা দিতে শোনা যায় শেখ হাসিনাকে। জুলাই আন্দোলন দমন ও হতাহতের তথ্য গোপন করতে, যখন তখন বন্ধ করে দেওয়া হতো ইন্টারনেট। কে জানত এই ইন্টারনেট সেবা বন্ধই কাল হয়ে উঠবে শেখ হাসিনার জন্য। কারণ বাধ্য হয়ে তখন অনেকের সঙ্গেই ফোনে কথা বলতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে।