গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আর কেউ যাতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে না পারে।
সোমবার বিকালে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন দিলে হেরে যাবে, এই ভয়ে তারা পুরো ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। কেন একজন ব্যক্তি চাইলেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে? কেউ একজন চাইল আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখল বছরের পর বছর, একটার পর একটা তামাশার নির্বাচন করে সে টিকে গেল! এর কারণ, সে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাটাকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। আমাদের দেশে যতগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে-পুলিশ, প্রশাসন, আইন-কানুন, সংবিধান, সেনাবাহিনী-সবকিছু পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। এভাবে পকেটে ঢুকিয়ে, জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তারা। দেশ উজাড় করে দিয়ে বিদেশিদের পায়ে ধরে ক্ষমতা রক্ষা করতে চেয়েছিল তারা। এজন্য আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে হবে, একইসাথে রাষ্ট্রকে যে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলা যায়-সেটা বাতিল করতে হবে। আর কেউ যাতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে না পারে। আমরা সেই কারণে লড়াই করেছি। যখন আমরা যুগপৎ লড়াই করেছি, তখনই আমরা এই প্রশ্নটা এনেছিলাম।
তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা তারা করতে পারে কারণ, আমাদের সংবিধানে ক্ষমতার কোনো ভারসাম্য নাই। ওখানে চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স নাই। কেউ কাউকে জবাবদিহি করতে পারে না। সব ক্ষমতা কেবল একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত। যে-ই প্রধানমন্ত্রী হোক, পুরো রাষ্ট্র তার পকেটে। এইরকম ক্ষমতা আছে বলেই তারা আমাদের ওপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পেরেছে। সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা এই ব্যবস্থার চূড়ান্ত নগ্ন চেহারাটা আমাদের সামনে দেখিয়েছে। যার পরিণতিও সে দেখেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কেউ যদি আমাদের দেশের নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে। দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনের কথা উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের দেশের সমস্ত জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন। আমরা সেটা থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেটা আমাদের গণঅভ্যুত্থানের অর্জন। কিন্তু এবারের লড়াইয়ে শুধু এতটুকু অর্জনের জন্যই আমাদের সন্তানরা, আমাদের নাগরিকরা এভাবে আত্মাহুতি দেন নাই, এভাবে শহীদ হন নাই। হাজার হাজার তরুণ আহত হয়ে পঙ্গুত্বের চিহ্ন বহন করে চলেছে।
তিনি বলেন, আমরা যদি ব্যবস্থা বদলাতে চাই, তাহলে প্রথমে শুরু করতে হবে ন্যায়বিচার দিয়ে। ১৯৭১ সালের পরেও এদেশের মানুষ বলেছিল, ৭১-এ যে অপরাধ হয়েছে তার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু ঠিকমতো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। আজকে ২৪-এর পরেও আমরা আওয়াজ তুলছি, এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না করলে আমরা রাষ্ট্রটা যে জায়গায় নিতে চাই সেখানে যাবে না। রাষ্ট্র যদি ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম করতে না পারে, তাহলে সেটা জনগণের রাষ্ট্র থাকে না।
গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলার সভাপতি মুনীর চৌধুরী সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য প্রখ্যাত কৃষক নেতা দেওয়ান আব্দুর রশীদ নীলু, গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় পরিষদের সদস্য মো. অলিয়ার রহমান শেখ, দলের খালিশপুর উপজেলা আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলার সভাপতি সাকিবুল ইসলাম সাফিন, জেএসডির খুলনা মহানগরের সভাপতি খান লোকমান হাকিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদ খুলনা মহানগরের সভাপতি শেখ আবদুল হালিম, গণসংহতি আন্দোলন অভয়নগর উপজেলার সদস্য সচিব সামস সারফিন সামন, খালিশপুর দৌলতপুর জুটমিল যৌথ কারখানা কমিটির নেতা মনির হোসেন মনি, প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিকনেতা নূরুল ইসলাম, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিক নেতা মো. জহিরুল ইসলাম জব্বারসহ বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম সংগঠন ও দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।