English

28.6 C
Dhaka
শনিবার, আগস্ট ৯, ২০২৫
- Advertisement -

জুলাই আন্দোলন সফল করতে যে কৌশল নিয়েছিলেন, জানালেন আখতার

- Advertisements -

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই গণআন্দোলনে এমন মানুষজন রাস্তায় নেমেছেন যারা একে অপরকে চিনতেন না, কিন্তু বিপদের মুহূর্তে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গুলিবিদ্ধ আহতকে অপরিচিত কেউ তুলে নিয়েছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহযোদ্ধাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। এ সময়টা আমাদের জাতিকে একসূত্রে বেঁধেছে—এটাই ছিল আমাদের বড় অর্জন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

আন্দোলনের শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও যৌক্তিক দাবি-আন্দোলন। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা কখনোই সম্পূর্ণ কোটা বাতিল চাননি; বরং যুগোপযোগী সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। কারণ, অনগ্রসর ও পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কিছু অংশে কোটা সংরক্ষণের যৌক্তিকতা তখনও ছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তড়িঘড়ি করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে কোটা পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেয় এবং পরবর্তীতে তা পরিপত্র আকারে জারি করে। তখন থেকেই আমাদের মধ্যে আশঙ্কা ছিল, এ সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ভিন্নমুখী রায় আসার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেটিই বাস্তব হয়ে দেখা দেয়।

২০২৪-এ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪-এ সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরো বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হলেন। ২৪-এর আগের ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, সড়ক আন্দোলন বা আবরারর ফাহাদের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের ক্ষমতাকাঠামোর যে সামান্য চিড় ধরেছিল সেটা সারতে তারা পরবর্তীতে মরিয়া হয়ে উঠে। যে পরিস্থিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলো সেটাকে ২৪ -এ ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন।

ঠিক একইপন্থায় হাইকোর্টে রিট করে তারা কোটা ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সেদিনের ৫ জুন যখন রায় ঘোষণা করা হয় তখন আমি আমার ল’ চেম্বারে কাজ করছিলাম। ফেসবুকে ঢুকে জানতে পারি। ঠিক সে সময়টাতে এটা যে একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ও আমাদের শিক্ষার্থীদের ত্যাগের বিনিময়ে যে অর্জন এসেছিল তার সাথে প্রতারণা করা হলো। সে বিষয়ে ফেসবুকে লিখতে দেখি।

আমার তৎকালীন সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনা শুরু করি। এরমধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক আমার কাছে আসেন সেখানে তারা কোটা বিষয়টাই সরকারের ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে কথা বলেন। তখন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নাহিদ, আসিফ, আবু বাকের মজুমদারসহ কথা বলে ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেই। তখনই আমাদের মধ্যে ভাবনা আসে, যে যতটুকু সম্ভব, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সোচ্চার ছিলেন—তাদের সবাইকে একত্র করে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া দরকার। সেই চিন্তা থেকেই আমরা সেদিন সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করি।

রাজনৈতিক কারণেই আন্দোলনের শুরুতে সামনে না থেকে পেছন থেকে কাজ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, স্বাভাবিকভাবেই ক্যাম্পাসে আমার দীর্ঘদিনের একটি রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল—ছাত্রলীগ বিরোধী, ভারত বিরোধী এবং সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার একজন ছাত্রনেতা হিসেবে। সেই প্রেক্ষাপটে সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিলে সরকার সহজেই এটিকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যেত। তাই আমি বিক্ষোভে সরাসরি অংশ না নিয়ে, বিক্ষোভ শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় একটি খোলা সভা হয়, যেখানে আমি পাশেই অবস্থান করি।

তিনি আরও বলেন, ওই সভা শেষ হওয়ার পর আমরা একটি ক্লোজড মিটিং করি—যেখানে আমি, নাহিদ, মাহফুজ, আসিফ, বাকেরসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেই, এই আন্দোলন দলীয় ব্যানারে না হয়ে সার্বজনীনভাবে পরিচালিত হবে, যাতে যে কেউ—যে এই দাবির সঙ্গে একমত—আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমাদের কৌশল ছিল, শুরুতেই যেন সরকার এটিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে দমন করতে না পারে। তাই আমি নিজেই আন্দোলনের সামনের সারিতে না থেকে পেছন থেকে এবং আশপাশে থেকে সংগঠক হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করি।

আন্দোলন সংগঠিত করার সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ছাত্রনেতা আখতার হোসেন বলেন, জুন মাস থেকেই আমরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন সংগঠিত করতে শুরু করি। তখন ঈদের সময় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়, তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারকে একটি আল্টিমেটাম দেওয়া হবে—যাতে সরকার হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে কোটা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে এবং পূর্বের সংস্কার বহাল রাখে।

এই সময় আমরা সারাদেশের শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে যারা ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন, তাদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করি। চেষ্টা ছিল, একটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বা সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একইসঙ্গে আন্দোলন সংগঠিত করা যায়। সেই অনুযায়ী আমরা একটি কাঠামো নির্মাণে কাজ করি।

আখতার হোসেন বলেন, পরে জুলাই মাসে সর্বাত্মকভাবে আন্দোলন শুরু হয়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নামতে থাকেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, যখন কোনো মিছিল হলপাড়া দিয়ে অগ্রসর হতো, তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতো। বহু উত্তপ্ত পরিস্থিতি পেরিয়ে আমাদের শুরুর দিকের মিছিলগুলো হল এলাকা অতিক্রম করে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যেত। একপর্যায়ে আমরা শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নিতে শুরু করি।

অবস্থান থেকে অবরোধ কর্মসূচির বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, একটা সময় বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি আসে এবং সে কর্মসূচি শাহবাগ থেকে ধীরে ধীরে ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড় হয়ে সেটা ফার্মগেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এক্সপ্রেস হাইওয়ে পর্যন্ত এটার ব্যাপ্তি ছড়াতে থাকে ধীরে ধীরে। ততদিনে আসলে বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারের আন্দোলনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ১৬ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছিল। যে ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের দমন করে রেখেছিল, ভয়ভীতি, নিপীড়নের মাধ্যমে হলে হলে কর্তৃত্ব চালিয়েছে—সেই ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে হল থেকে বের করে দেয়। তারা হলগুলোকে ছাত্রলীগমুক্ত করতে সক্ষম হয়। ওই রাতটা ছিল ভিন্নরকম আনন্দের, বিজয়ের অনুভূতির। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, খোঁজ নিচ্ছিলাম—কোন হলে ছাত্রলীগের পতন ঘটেছে। একটার পর একটা হলে ছাত্রলীগ বিতাড়িত হচ্ছিল, আর বাকি হলের শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সাহস সঞ্চয় করছিল।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/jqlg
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন