প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদান শুরু থেকেই সবার একভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর আগেও তিনি বিভিন্ন কাজে বাংলাদেশের বাহিরে বিভিন্ন দেশে গেছেন। এর আগে কখনো তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সাথে নেননি। এবারে হঠাৎ করে নিলেন এবং নিলেনও এমনভাবে, এমন লোকজনকে, যেটা মনে হল খুবই একটা খন্ডিত চিত্র। যদি রাজনৈতিক দলের নেতাদের তিনি সঙ্গে নিতে চান-ই তাহলে হয়তো এর পরিসর এত ছোট হত না। উনি এত চুজি থাকতেন না। অন্যদেরও সাথে নিতে পারতেন। কেন এরকম করে পছন্দ করলেন? কি উদ্দেশ্য? এটা তখন কেউই বুঝেনি। স্পেকুলেশন আছে।
অনেকে অনেকভাবে বলছেন টকশোতে। অনেক কথাবার্তা উঠেছে। এবারে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘে যাওয়া মানে নিউইয়র্কে যাওয়া। এই উপলক্ষ্যে আওয়ামীলীগ খুব উচ্চস্বরে একটা কর্মসূচি অর্থাৎ প্রতিবাদ ও ডেমোন্সট্রেশনের ঘোষণা করেছিল। তার প্রেক্ষিতে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সাথে নেওয়া অথবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তার সাথে যাওয়া এবং বিএনপির ওখানকার স্থানীয় শাখা একটা সমাবেশ ঘোষণা করা বেশ কৌতূহল ও চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল। অনেকে পর্যবেক্ষণ করছিল ঘটনাগুলো। কিন্তু আজ সকালে ভিডিওতে আমরা যেগুলো দেখলাম তা থেকে আরো নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হলো। বোঝা গেল বিএনপি এমন কোনো ডেমোন্সট্রেশন করেনি। প্রধান উপদেষ্টা নিজের মতো করে তার প্রোটোকল দিয়ে সেইফ এক্সিট যেমন হয় সেই রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছেন। জামায়াতের নেতাদেরও তাদের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে নিরাপদে বের করে নিয়ে গেছেন। কিন্তু শুধু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং এনসিপির দুই নেতাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল বলে মনে হল না। তার ফলে যে দৃশ্যের অবতারণা হলো- তা একটা কুৎসিত দৃশ্য। যেইভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছিল, গালাগালি করছিল, তা অশ্লীলতায় সয়লাব হয়ে গেল।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের গতবছরের পরাজয় তাড়িত হতেই পারেন। এরকম পরাজয় বিভিন্ন জনের হয়েছে। বাংলাদেশে অত্যাচারের মাত্রা খুব বেশি ছিল, ঐ জন্য জনগণ উত্তপ্তও বেশি ছিল। আওয়ামী লীগ সে ব্যাপার আমলে নেয়নি।তারা মনে করছে সব জনগণের দোষ। তারা মূর্খ। তারা শেখ হাসিনার কারিশমা বুঝতে ব্যর্থ। নিউইয়র্কে আজকের এই অশ্লীল ডেমোন্সট্রেশন প্রমাণ করে অদূর ভবিষ্যতেও তারা এই উপলব্ধিতে আসতে পারবে না। কিন্তু মুখ খারাপ করে গালাগালি করলে গায়ের ঝাল মেটে, রাজনীতিতে কিছু অর্জন করা যায় না। আওয়ামী লীগ সেটা বুঝতে ব্যর্থ। এক ধরনের অশ্লীল প্রচারণায় একদা বাংলাদেশের বৃহত্তম দল বিশ্বাস করে। এই ধরনের মানসিকতা সাম্প্রতিককালে ঢাকাতে স্লোগানে দেখেছি, এখানে অভ্যূত্থানে বিজয়ীদের কারো কারো থেকে এমন অশ্লীল স্লোগান দেয়া হয়েছে যা মুখে আনা অসম্ভব।
যাইহোক এখানে বসে শুধু নিউইয়র্কে সংঘটিত ঘটনার ভিডিও দেখা যায়। আমেরিকা প্রবাসী যারা আওয়ামী লীগ করেন কিংবা বিএনপি করেন কিংবা যেকোনো পার্টি করেন, তাদেরকে সংস্কৃতি শিখানো তো আমার পক্ষে সম্ভব নয় কিংবা কেউই পারবেনা। সংস্কৃতির দিক থেকে আমেরিকা আমাদের চাইতে অন্তত এই ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবার কথা। যারা মেলা বছর ধরে ওখানে আছেন তাদেরও সেই ডিসিপ্লিন, সেই কালচার এর মধ্যেই শিক্ষিত হয়ে উঠবার কথা। কিন্তু হননি। বোধ হয় দেশ থেকে যা শিখে গেছেন এখনো দেশের সেই দলীয় সাংস্কৃতির মধ্যে বাস করছেন। তার বাহিরে তারা আসতে পারেননি।
আমার কষ্ট লাগছে এই ভেবে যে সমগ্র ব্যাপারটায় কি রকম নিচে নেমে গেল দেশের সম্মান। জনাব ইউনুসের জাতিসংঘের সফর নিয়ে, এরপর হয়তো অন্যান্য খবর প্রকাশিত হবে, তার বক্তৃতা প্রকাশিত হবে কিন্তু তার মধ্যে একটা বড় দাগ কালো টিকার মত রয়ে গেল, যা আজকের এয়ারপোর্টে হল। আমার মনে হয় এই ঘটনা এভয়েড করা যেত যদি যারা এই সফর পরিকল্পনা করেছেন, নিউইয়র্কে যারা আছেন কর্মকর্তারা তারা চিন্তা করলে এই অস্থির অশ্লীল পরিস্থিতি থেকে বাহিরে রাখতে পারতেন।
বেচারা আখতার! বেচারা বলছি মানে ছোট করছি না। যেরকম করে ডিম মারবার পরপর তার ছবি দেখানো হচ্ছে, সেটা কুতসিত লাগে। আখতার তার মনের দিক থেকে শক্তই ছিলেন, তিনি সেখানে একটা ব্রিফিংও করেছেন। কিন্তু তারপরও এই ডিমটা যদি তাসনিম জারার গায়ে পড়তো অথবা তাকে আরও অপমান করা হত, তাহলে কী হত? ড. ইউনূস যে তাদেরকে সাথে করে নিয়ে গেলেন, তাদের নিরাপত্তার কথা কি ভেবেছিলেন তিনি? রাজনীতি কি এত হালকা মাপে চলে? এদের কি জন্য নিয়ে যেতে হল ডক্টর ইউনুসের? নিজে এনসিপির প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল। তাদেরকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছেন। জানি আমরা। এটাও জানি যে এটা ঠিক নয়। তার মতো জায়গায় থেকে একটা দলের প্রতি এরকম স্নেহ প্রকাশ করা উচিত নয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নাহিদকে, আখতারকে, জারাকে স্নেহ করতে পারেন, সহযোগিতাও করতে পারেন। আর রাষ্ট্রীয়ভাবে এই প্রদর্শন, সাথে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে যেটা হলো সেটা আখেরে কোন ভাল ফল দেবে বলে আমার মনে হয় না।
ভালো থাকবেন সবাই।