জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করে।
রায় ঘোষণার পর শহীদ আবু সাঈদের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘আমরা এ রায়ে খুশি হয়েছি। তবে রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনও একই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘শুধু রায় ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকর করতে হবে।’
মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ছেলেকে হারানোর শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয় সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছায়।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে-
১. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান
২. প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
৩. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে হত্যা
৪. রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ। তার হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।