অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ ছাত্র উপদেষ্টাদের সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)।
তিনি বলেন, যারা সরকারে থেকে দল করছেন, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতির মাঠে আসুন। দেশের জনগণ যাকে মেনে নেয়, আমরাও তাকেই গ্রহণ করব। সরকারের ক্ষমতা আর মববাজি দিয়ে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাবে, আমরা তা মেনে নেব না।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় জাতীয় দলটির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অতি সম্প্রতি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন ও তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির প্রসঙ্গ টেনে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদদের প্রশ্ন করে, এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাবে, টিভি স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে— এমন কালচার আমরা দেখতে চাই না। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছি আরেক ফ্যাসিবাদকে গ্রহণ করতে নয়। আমরা এই নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। আমরা নব্য ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের রুখে দেবো।
সরকার বারবারই সংস্কারে জোর দিলেও কোনো ‘অবাস্তব’ সংস্কারের পক্ষে জাতীয় পার্টি নেই বলে জানান জি এম কাদের। বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনুস আমাদের সম্মানের পাত্র, তিনি আমাদের মাথার মুকুট। আপনি যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকেন। আপনাকে দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব হবে না। আপনার দ্বারা কোনো সংস্কার আমরা বিশ্বাস করি না।
যারা সংস্কার করছেন, তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট জানেন না উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা সংস্কার প্রস্তাবগুলো টেবিলে রেখে যান, পরবর্তী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাই সংস্কার করবে। এই মুহূর্তে আমরা সংস্কার চাই না। সরকারপ্রধান হিসেবে যার ওপরে আমাদের কোনো আস্থা নেই, আমরা তাকে চাই না। তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তারা যে নতুন দল করেছে তা পুরনো স্টাইলেই আগাচ্ছে। চাঁদাবাজি ও শোডাউনের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা কাকের গায়ে ময়ূরের পালক লাগিয়েছে। তারা দেশের পরিবর্তনের জন্য কোনো কাজ করছে না।
রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন জি এম কাদের। বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন চলছে। আমরা আর অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করব না। আপনারা দেশের অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর ভোটাধিকার দিতে চান না, আমরা আপনাদের ওই চিন্তার ধার ধারি না। কোনো ফ্যাসিবাদি সিদ্ধান্ত আমরা দেখতে চাই না। যতদিন পর্যন্ত নব্য ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে। যেহেতু আপনি অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন করতে পারছেন না, দয়া করে আপনি বিদায় হোন।
বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। আরও অনেকেই বেকার হওয়ার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে অনেক কল-কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মিল-কারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। মালিকপক্ষ যে দলই করুক, শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্ধ সব কলকারখানা চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কৃষকরা ফসল উৎপাদন করছে, দাম পাচ্ছে না। গেল রমজানে সরকার বাহাদুরি করে বলেছে, সব নিত্যপণ্যের দাম কম। কিন্তু সরকার বোঝে নাই কৃষকদের কষ্ট। ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এখন মালামালের দাম বেড়েছে। কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকের হাতে টাকা নেই এবং ব্যবসায়ীদের হাতেও টাকা নেই। প্রতিদিন রপ্তানি কমে যাচ্ছে। দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না, নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ঋণ দেবে না। বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হবে না। এ সরকার দেশকে বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন ও প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস-চেয়ারম্যান আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন।
জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি মেফতাহ উদ্দিন জসিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ শান্তর সঞ্চালনায় মে দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, নাজমা আকতার, এমরান হোসেন মিয়া, শেরিফা কাদের, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, মনিরুল ইসলাম মিলন, মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও মো. আরিফুর রহমান খানসহ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও যুগ্ম সম্পাদক এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।