সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগ মুক্তি ও সুস্থতা কামনায় বৃহস্পতিবার রাতে নিকুঞ্জের জাহিদ ইকবাল চত্বর যেন পরিণত হয়েছিল এক ঐতিহাসিক, আবেগঘন ভিন্ন রকম এক মিলনমেলায়।
বেগম জিয়ার আরোগ্য কামনায় আয়োজিত এই বিশেষ দোয়া মাহফিলটি ছিল সম্পূর্ণরূপে অরাজনৈতিক এবং সর্বদলীয়, যা প্রমাণ করে জনগণের হৃদয়ে তাঁর অবস্থান দল-মতের ঊর্ধ্বে।
দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে যুবক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত, তাদের প্রিয় নেত্রীর সুস্থতা কামনায় এখানে সমবেত হন। এই আয়োজনে উপস্থিত সকলের চোখে ছিল গভীর উদ্বেগ ও ভালোবাসা, আর কণ্ঠে ছিল নেত্রীর প্রতি অটুট শ্রদ্ধা ও ভক্তি। নিকুঞ্জের এই চত্বরটি মুহূর্তেই পরিণত হয় আপামর জনতার নীরব প্রার্থনাস্থলে।
এই আবেগঘন সমাবেশে বক্তারা বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের আপসহীন নেতৃত্ব এবং দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর অসামান্য ত্যাগের ভূমিকাকে সশ্রদ্ধচিত্তে উচ্চকিত করেন। তাঁদের কণ্ঠে ছিল এক দৃঢ় প্রত্যয়: অগণিত ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং বিশেষ করে আপসহীন ভূমিকার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আজ আর কেবল একটি দলের নেত্রী নন; তিনি সকল দল মতের উর্ধ্বে উঠে সারা বাংলাদেশের নেত্রী হিসেবে বিবেচিত। তাঁর সুস্থতা কামনায় আজকের এই ব্যাপক উপস্থিতিই তার জীবন্ত প্রমাণ। বক্তারা আরও আবেগাপ্লুত হয়ে উল্লেখ করেন, শত অত্যাচার-নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি কখনও মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে তিনি এক চুলও ছাড় দেননি—যা তাঁকে জনগণের কাছে এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে।
একজন বক্তা জোরালোভাবে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলার একমাত্র আপসহীন নেত্রী। তিনি যদি আপস করতেন, তাহলে এত বড় গণঅভ্যুত্থান হতো না; পতন হতো না দানব হাসিনার।
এই বক্তব্যে চত্বরে উপস্থিত জনতা করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানায়। অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায়, সিনিয়র সাংবাদিক ও সমাজকর্মী জাহিদ ইকবাল-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই মহতী সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খিলক্ষেত থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি, জনতার কমিশনার খ্যাত মো: শাহিনুর আলম মারফত।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সৈকত সরকার, ইমানুল হক, এমদাদুল ইসলাম বাবু, নুরুল আমিন ঝিন্টু, জুয়েল জাহিদুল, এএম আইয়ুব পাপ্পু, মুকুল হোসেন মৃধা, আমির হোসেন প্রমুখ।
আলোচনার পর শুরু হয় বিশেষ দোয়া মাহফিল। জামতলা জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা হোসাইন আহমদ অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে মোনাজাত পরিচালনা করেন। অসুস্থ নেত্রীর দ্রুত আরোগ্য, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় উপস্থিত সকল দল মতের মানুষ মহান আল্লাহর দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফরিয়াদ জানান। প্রতিটি হাত ছিল উত্তোলিত, প্রতিটি মুখ ছিল প্রার্থনায় মগ্ন। মোনাজাতের সময় পুরো পরিবেশ এক গভীর আধ্যাত্মিক শান্তিতে ভরে ওঠে।
মোনাজাত শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে তবারক বিতরণের মাধ্যমে এই মানবিক ও আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এই আয়োজন প্রমাণ করল, বেগম খালেদা জিয়া এখনও বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক।
