English

37 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

আজ মহাস্থানগড় মাজারে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা, কঠোর নিরাপত্তায় ৫শতাধিক পুলিশ

- Advertisements -

গোলাম রব্বানী শিপন, মহাস্থানগড় বগুড়া থেকে: অতীত সভ্যতার লীলাভূমি হিন্দু ও মুসলমানের তীর্থস্থান বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে আজ বৃহস্পতিবার উদযাপিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শেষ বৈশাখী মেলা। লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হবে মহাস্থানগড় হযরত শাহ সুলতান বলখী (রহঃ) এর মাজার কেন্দ্রীক শেষ বৈশাখী মেলা। মেলা উপলক্ষে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই আলোক সজ্জ্বায় সাজানো হয়েছে পুরো মাজার এলাকা। বসেছে সাধু-সন্ন্যাসী ও পূণ্যার্থীদের হাট বাজার। এখানে হবে লাখো মানুষের সমাগম।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের প্রন্ডভূমি ছিল এককালে বাংলার রাজধানী। তৎকালীন হিন্দুরাজ্যের অত্যাচারী রাজা পরশুরামকে যুদ্ধে পরাজিত করে বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল সুফী ও সাধক হযরত শাহ সুলতান মাহীসওয়ার বলখী (রহঃ) তিনি ইসলামের পতাকা উড্ডয়ন করেন। তার এ বিজয় ও স্মৃতি স্মরণে প্রতি বছর বাংলা সনের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার মহাস্থানগড়ে বসে এ শেষ বৈশাখী মেলা। এ মেলায় যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগী ও জিকির আজগরে মেতে ওঠেন। অন্যদিকে আধ্যাত্মিক সাধনা বিশ্বাসী জটাধারী সাধু, সন্ন্যাসী, বাউল-সুফি ও তরিকা অনুসারীরা মারফতী জগতের গান বাজনা করে সারা রাত আসর জমায়।

আগে এসব আসরে পালা করে গাঁজা সেবন করতে দেখা গেলেও, বেশ কয়েক বছর ধরে অবশ্য মাজারের পবিত্রতা রক্ষার্থে প্রশাসন ও এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে মাদকের কোন ধূয়া যেন না উড়ে এজন্য সুধী সমাবেশও করা হয়েছে। তবে বেশ কিছু ভন্ড জটাধারীরা গোপনে গাঁজা সেবন করলেও সেটি মাজার এলাকার বাহিরে করে থাকেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মাজার জিয়ারতকারী মুসল্লী, দর্শনার্থী ও সাধু সন্ন্যাসীরা শুধু হযরত শাহ সুলতান বলখী (রঃ) এর মাজারেই নয়। তারা অবস্থান নিয়েছে মাজারের উত্তরপাশে দুধপাথর, মানকালী ও পাশে হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) এর মাজার এর পশ্চিমে আমবাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকা জুড়ে বসেছে এক একটি আস্তানা।

Advertisements

হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) এর মাজার ও পশ্চিমে মানকালী নামক চত্বরে সামিয়ানা টাঙিয়ে মারফতি গানের আসর বসিয়েছে বাউল সাধকেরা।

এদিকে মাজার সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ জুড়েই বসেছে হরেক রকম অস্থায়ী দোকানপাট। খাবারের হোটেল, মিষ্টি ও পণ্যসামগ্রীসহ বস্ত্র বিতান, নাগর দোলা, মোটরসাইকেল খেলা, জাদুর খেলা ইত্যাদি। মেলায় আগতরা বাড়ি ফেরার পথে নানা সামগ্রী কেনাকাটা করেন। মহাস্থানে এসে অনেকেই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তাদের মানতকৃত দুধ বিশাল একটি প্রত্ন পাথরে ঢেলে দেন। মাজারে দানের টাকা- পয়সা ও খাবার পাওয়ার আশায় অনেক ফকির-মিসকিনও জড়ো হয়েছে।

এবারও প্রশাসনের থাকবে কঠোর ভূমিকা। এলাকা জুড়ে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা। ওই দিনে আইনশৃঙ্খলা বিহিনীর ৫০২জন সিভিল ও পোশাকধারী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট, সর্বক্ষণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে মাজারের বেশ কিছু এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। মহাস্থানগড় মাজার এলাকায় কেউ যেন কোন প্রকার মাদক দ্রব্য খাওয়া বিক্রি বা অসামাজিক কার্যকলাপ করতে না পারে সেজন্য বিশেষ সতর্কতায় থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গত বছর গুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা জনিতকারনে প্রশাসন মাজারের পাশের মার্কেট গুলোর অলিগলি ও রাস্তায় বেরিকেট দিয়ে বন্ধ করে দিলেও এবার সেগুলো খোলা রাখা হয়েছে।

এবিষয়ে শিবগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, মহাস্থানগড়ে ঐতিহ্যবাহী শেষ বৈশাখী মেলাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার জুম্মার নামাজ আখেরী মোনাজাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত বা মেলায় কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে এজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকের পুলিশও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।

Advertisements

প্রয়োজনে মহাস্থান হযরত শাহ সুলতানের মাজারের প্রধান ফটকে প্রত্যেক দর্শনার্থীকে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা তল্লাশীর মাধ্যমে মেলায় প্রবেশ করানো হবে।

এবিষয়ে মহাস্থান মাজার মসজিদ কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী শেষ বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মাজার কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে মেলার ভিতরে ও চারপাশে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে প্রায় ৬০টি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা , ছিনতাই ও পকেটমার, মাদক প্রতিরোধ ও ইভটিজিং ঠেকাতে কাজ করা হবে।
এছাড়াও অগ্নিনির্বাপণের জন্য থাকবে ফায়ার সার্ভিস ইউনিট ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা।

শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ বৈশাখী মেলা উৎসব পালনে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন৷ মেলা উপলক্ষে মহাস্থান মাজারের আশেপাশে এলাকাবাসীদের বাড়ি বাড়ি মেয়ে জামাই সহ আত্মীয় স্বজনদের ভির জমেছে। মহাস্থানগড় শেষ বৈশাখী মেলায় এখানকার ঐতিহ্যবাহী শতশত মণ কটকট বিক্রির ধুম পড়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন