পাবনার চাটমোহর উপজেলার একটি গ্রাম মামাখালী, যে গ্রামে এখনো বর্ষা মৌসুমে চলাচল করতে হয় কাদা আর পানির রাস্তায়। উপজেলার ছাইকোলা ও নিমাইচড়া দুই ইউনিয়নের সীশান্তবর্তী হলেও ইউনিয়ন দুটির ভেতর গ্রামটির অবস্থান। কাগজে-কলমে বনমালী নগর নামের মৌজার গ্রামটি স্থানীয়ভাবে মামাখালী গ্রাম নামে পরিচিত। গ্রামটিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বসবাস হলেও নেই শুধু ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, মামাখালী গ্রামের পূর্বপাড়া থেকে বরদানগর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কাঁচা সড়কটি গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বেহাল সড়কটিতে চরম দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। অনেক সময় বর্ষার পানিতে রাস্তাটি তলিয়ে গেলে তিন-চার মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দ্বীপের বাসিন্দাদের মতো দিন পার করতে হয় গ্রামবাসীর। শুধু যানবাহনই নয়, হেঁটে চলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যাদের সামর্থ আছে তারা নৌকায় যাতায়াত করেন।
বিদ্যালয়গামী শিশুরা প্রতিদিন কাদা-পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ মূলত গ্রামটির একাংশ ছাইকোলা ইউনিয়নের ও অপর অংশ নিমাইচড়া ইউনিয়নে হওয়ার কারণেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে না। ফলে পুরো এলাকাটি বছরের পর বছর থেকে যায় সুবিধাবঞ্চিত। তারা দাবি করেন মামাখালী পূর্বপাড়া থেকে বরদানগর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তাটি প্রথমে মাটির কাজ শেষে পাকাকরণ করা হোক। তাহলে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়, অপরদিকে তারা চলাচল করে সাচ্ছন্দবোধ করবেন।
গ্রামের বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, জন্মের পর থেকেই এই গ্রামের এমন অবস্থা দেখে আসছি। আমার যৌবন বয়সে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গুড়া উপজেলা সদরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। গবাদী পশু নিয়ে বর্ষা মৌসুমে আমাদের ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হয়।
গৃহবধূ রহিমা খাতুন বলেন, আমার ছোট ছেলে স্কুলে পড়ে। প্রতিদিন বই খাতা ভিজে যায়। কখনো কাদায় পড়ে যায়, তখন খুব কষ্ট লাগে। আমরা কি এই কষ্ট নিয়েই বাঁচবো? আমাদের এলাকার উন্নয়ন কি কখনো হবে না- প্রশ্ন তার।
সোলায়মান, ইজ্জত আলী, আবুল হোসেনসহ একাধিক বয়স্করা বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের সময় সবাই আসে রাস্তা পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ভোট নেন। নির্বাচিত হওয়ার পর আর কেউ ফিরে তাকায় না গ্রামটির দিকে।
বনমালীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বাসনা রানী মন্ডল বলেন, বর্ষাকালে রাস্তা-ঘাট এতটাই পিচ্ছিল আর কাদা হয় যে, শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় বইপুস্তক নষ্ট করে ফেলে। আমরা শিক্ষকদেরও বর্ষা মৌসমে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা প্রকৌশলী মোহা: রাকিব হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এই ষ্টেশনে নতুন, আমার জানা ছিল না। তারপরও আমাদের নিকট সে ভাবে কেউ কখনো প্রকল্প নিয়ে আসেনি, তাই রাস্তাটি মেরামত হয়নি। আমরা স্ব উদ্যোগে খোঁজ খবর নিয়ে রাস্তাটি মেরামতের চেষ্টা করবো বলেও জানান তিনি।